অর্ধসমাপ্ত: কান্দিতে। নিজস্ব চিত্র
মাস চারেক আগের কথা।
ভোরের বেলায় ঘটি হাতে মাঠের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই পিছন দিক থেকে হাক, ‘‘এ কী করেন দাদা!’’
চমকে যান মৃত্যুঞ্জয়। পিছন ফিরে দেখেন, খোদ বিডিও দাঁড়িয়ে।
প্রকৃতির ডাক উপেক্ষা করে তাঁদের ডাকেই সাড়া দিতে হয়। সরকারি কর্তারা বোঝান, মাত্র ৩২০০ টাকা দিলেই সরকার বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করে দেবে। এ ভাবে খোলা আকাশের নীচে শৌচকর্ম করা অস্বাস্থ্যকর।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। সেই সময় দেশ জুড়ে টাকা বাতিলের প্রক্রিয়া চলছিল। সমস্যায় জেরবার মানুষ যে কোনও উপায়ে হোক, শৌচাগার নির্মাণের জন্য টাকার ব্যবস্থা
করে দেন।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই টাকা জমা দিয়েছিলেন অধিকাংশ বাসিন্দা। কিন্তু তার পরে চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও তৈরি হল না শৌচাগার।
কান্দি ব্লকের যশোহরি আনোখা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কয়া, কামারপাড়া, রাতুনি গ্রামের ঘটনা।
কামারপাড়ার বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় দাসের স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছয় জনের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা লেগেই থাকে। পেশায় রাজমিস্ত্রী মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “মাস চারেক আগে এক দিন ভোরের কথা। ঠিক মতো সকাল হয়েছে কী হয়নি। দেখি গ্রামে ব্লক অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে হাজির কর্তারা। মাঠে শৌচকর্ম করলেই প্রশ্ন করছে। ওই কর্তাদের কথায় বাড়িতে কিছুটা ধান ছিল, সেটা বিক্রি করে দিই। তার পর বিক্রির ৩২০০ টাকা শৌচাগারের জন্য পঞ্চায়েতে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও শৌচাগার হল না।”
অভিযোগ, মৃত্যুঞ্জয়বাবুর মতো লোকেদের বাড়িতে শুধুমাত্র আধাখেঁচরা ভাবে তৈরি
তিনটে দেওয়াল তৈরি করে রেখেই চম্পট দিয়েছে নির্মান সংস্থা।
যেমন, কামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মেঘনাথ সাহা বলেন, “এমনিতেই শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়ার আগে বলেছিল, দিন সাতেকের মধ্যে কাজ শেষ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেতো প্রায় তিন মাস ঘুরে গেল! এখনও দেখা নেই ওই নির্মাণ সংস্থার। পঞ্চায়েতে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কিছু হচ্ছে না।”
একই ভাবে ওই গ্রামের বাসিন্দা পূর্নিমা সাহা বলেন, “আমাকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও কোনও
কিছুই হয়নি।”
আবার কয়া গ্রামের বাসিন্দা সুদর্শন মণ্ডল বলেন, “এ বার মনে হচ্ছে ওই টাকাটা ফেরত নিতে হবে। টাকা জমা নেওয়া নিয়ে প্রশাসনের যে তৎপরতা ছিল, এখন শৌচাগার নির্মানের ক্ষেত্রে তার বিন্দুমাত্রও দেখা যাচ্ছে না।”
যদিও যশোহরি আনোখা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের প্রীতিকণা ভান্ডারি বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে মিশন নির্মল বাংলার শৌচাগার নির্মানের কাজ চলছে। দেরি হলেও হবে।”
শৌচাগারগুলি নির্মাণের বরাত পেয়েছে হরাইপুর দায়মোচন জনসেবা সমিতি। ওই সমিতির অন্যতম কর্তা রাধারমন দাসের কথায়, “আমরা যেখান থেকে শৌচাগারের রিংগুলি নিচ্ছিলাম, সেই সংস্থায় কর্তার এক নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর জন্য সমস্যা হয়েছে। এখন ফের কাজ শুরু হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সমস্ত শৌচাগার তৈরি করা হবে।”
কান্দির বিডিও সুরজিৎ রায়ও বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। তবে প্রথম দিকে বালির সমস্যার জন্য কাজ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। যাতে দ্রুত ওই শৌচাগারগুলি তৈরি হয়, সেই ব্যবস্থা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy