হাতে হাত ধরি...। রেজিনগরে জোটের মিছিল। ছবি: সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
ওঁরা আছেন, আবার তিনিও আছেন। এবং তিনি আছেন বলেই ওঁরা পরস্পরের হাত ছাড়ছেন না। কেন, ভূতের ভয়-টয় পাচ্ছেন নাকি?
মুর্শিদাবাদের এক জেলা নেতা বলছেন— ‘‘আর যাই হোক, রেজিনগরে ওঁকে তো একটু সমীহ করতেই হবে। ভূতের মতো না হলেও, ভয়ের কারণ তো এক মাত্র উনিই।’’
তিনি হুমায়ুন কবীর।
একদা অধীর চৌধুরীর দক্ষিণহস্ত। ‘দাদা’ হাঁ করলেই বুঝে যেতেন ঠিক কী চাইতে পারেন তিনি। তৃণমূলের জোয়ারেও ঠিক ছিনিয়ে নিয়েছিলেন রেজিনগর।
তবে দাদা-ভাইয়ের মন কষাকষি হয়েছিল পালাবদলের বছর ঘোরার আগেই। তার জেরেই দল ছেড়ে ডাকাবুকো হুমায়ুন ভিড়েছিলেন দিদির দলে। আর মন্ত্রীত্বের পালক গুঁজে সটান হাজির হয়েছিলেন মহাকরণে। তবে, কপাল মন্দ। পুরনো দাদাকে বিস্তর গালমন্দ করেও উপ নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন বিস্তর ব্যবধানে। তবে অধীর-বিরোধীতাকে মান্যতার পুরস্কার পেয়েছিলেন বটে দিদির কাছে। বিধায়ক পদ হারালেও মাস কয়েক তাঁকে মন্ত্রী রেখে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুচকি হেসে হুমায়ুনও জানিয়েছিলেন, ‘‘সবই দিদির ইচ্ছা।’’
সময় বদলায়। দাদার পরে এ বার দিদির সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয় তাঁর। দল বিরোধী কথা বলায়, (হুমায়ুন এখনও যাকে মনে করেন, খাঁটি কথা বলায়) দল থেকে এক সময়ে বহিষ্কারই করে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। চেষ্টা করেছিলেন বিজেপিতে ভিড়তে। শেষ অবধি তা-ও হয়নি।
শেষ একটা চেষ্টা করেছিলেন, কংগ্রেসের টিকিট পেতে। জোটেনি। দিন কয়েক আগে অতি উৎসাহী অনুগামীদের জন্য তৃণমূলের সভা পণ্ড হয়ে য়াওয়ায় তৃণমূলে ফেরার রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায় তাঁর।
আর দেরি করেননি। এ বার নির্দল হয়েই দাঁড়িয়ে পড়েছে হুমায়ুন। বলছেন, ‘‘দেখুন খেলা এখনও বাকি। হুমায়ুন এখনও মরে যায়নি।’’
পরিসংখ্যান অবশ্য তা বলছে না। গত দু’টো বিধানসভা নির্বাচনে, রেজিনগর কেন্দ্রে বাম প্রার্থীরা ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। তবে, তার আগে অবশ্য ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে হুমায়ুন জিতে ছিলেন ৮,৭৬১ ভোটে। দেড় বছরের মধ্যে, ২০১৩ সালে, এই কেন্দ্রেই উপনিবাচর্নে কংগ্রেসের রবিউল আলম চৌধুরীর কাছে প্রায় বারো হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন তিনি। এবং তাঁর ঠাঁই হয়েছিল সেই তৃতীয় স্থানে। তবে, এ বার কোন ভরসায় হুমায়ুন এমন হুঙ্কার ছাড়ছেন?
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও দলের প্রতীক না থাকলেও হুমায়ুনের অনুগামীদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কংগ্রেসের একটা অংশ এখনও যে তাঁর দিকেই ঝুঁকে রয়েছে, জেলা কংগ্রেসের নেতারাও তা মানছেন। আর তাই বামেদের ভোটেই ভরসা খুঁজছেন জোট প্রার্থী রবিউল।
অল্প সময়ে হলেও হুমায়ুনের নির্বাচনী প্রস্তুতিও দেখার মতো। শক্তিপুরের গড়দুয়ারা মাঠে দু’টো বড় সভা করেছেন ইতিমধ্যেই। সেখানে ভিড়ও মন্দ হয়নি। নির্দল প্রার্থীর এমন উপচে পড়া সভা দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে বাম-কংগ্রেসের। তাঁর মিছিলেও লোক হচ্ছে যথেষ্ট। তাঁর দাবি, বেশ কিছু কংগ্রেস কর্মী তাঁকে গোপনে সমথর্নের আশ্বাসও দিয়েছে।
ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকা বেগম। আদতে ডোমকলের বাসিন্দা সিদ্দিকাও কংগ্রেসের পুরনো নেতা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়ে তিনিও জেলা সামাল দিয়ে এসেছেন। একদা কংগ্রেসি সিদ্দিকাও জানেন হুমায়ুনের ‘ক্ষমতা’। ঘনিষ্ঠদের কাছে তা কবুলও করেছেন তিনি।
এই অবস্থায় পরস্পর হাতে হাত ধরে না থাকলে চলে? রেজিনগরের কংগ্রেস প্রার্থী রবিউল আলম চৌধুরীর সঙ্গে তাই ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বাম নেতা-কর্মীদেরও। যা দেকে মস্করা করছেন হুমায়ুন, ‘‘দেখেছেন তো, ওরা (বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা) এখন পরস্পরের হাত ছাড়ছেন না, পাছে হারিয়ে যান!’’
সিপিএমের রেজিনগর জোনাল কমিটির সম্পাদক মহম্মদ বদরউদ্দিনও স্বীকার করছেন ‘‘লড়াই একটা হবে ঠিকই, তবে কোনও কিছুই শেষ না দেখে ছাড়া উচিত নয়।’’ পরিসংখ্যান না হুমায়ুনের জনসংযোগ— কে যেতে, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy