বেঁধে রাখা হচ্ছে সেই নলকূপ। নিজস্ব চিত্র।
পানীয় জল থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে আক্রান্ত গোটা গ্রাম। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মোট ১৯ জন। মৃত্যু হয়েছে এক জনের। মৃতের নাম ফেন্সি মণ্ডল (৩১)। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন ফেন্সির দুই ছেলে সাগর মণ্ডল এবং বিশ্বজিৎ মণ্ডল।
মুর্শিদাবাদ থানা এলাকার ডাহাপাড়ার কমলা পুষ্করিণী এলাকার ঘটনা।
ঘটনার পর এলাকায় পৌঁছেছে মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ একটি দল। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত শুক্রবার ভোর বেলায় হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন ফেন্সি মণ্ডল। সকাল ছ'টা নাগাদ অসুস্থতা বাড়লে এক গ্রামীণ চিকিৎসককে নিয়ে আসেন ফেন্সির স্বামী, কিন্তু তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তারপর পরই অসুস্থ হন তাঁর দুই ছেলে। তাঁদের ভর্তি করা হয় আজিমগঞ্জ এজি হাসপাতালে।
তারপর শুক্রবার রাত থেকে হঠাৎই একে একে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। সূত্রের খবর, আক্রান্তদের মধ্যে এই মুহূর্তে দুই জন ভর্তি রয়েছেন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে, চার জন ভর্তি রয়েছেন লালবাগ মহকুমা হাসপাতালে এবং বাকি ১৩ জন ভর্তি রয়েছে আজিমগঞ্জ এজি হাসপাতালে।
গ্রামে ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে তাঁদের অনুমান পানীয় জলের কোনও সংক্রমণের কারণেই এমন বিপত্তি। গ্রামের বড় পুকুরের পাশে একটি টিউবয়েল রয়েছে ওই টিউবয়েলের জল গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই পান করেন। ওই টিউবয়েলের জলেই সংক্রমণ রয়েছে বলেই অনুমান৷
ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে ওই টিউবয়েলের জল পান করতে বারণ করা হয়েছে গ্রামবাসীদের এমনকি গ্রামের পুকুরে নামার বাঁধানো ঘাটের মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এত সংখ্যায় আক্রান্ত এবং এক জনের মৃত্যুর পর থমথমে হয়ে রয়েছে গোটা গ্রাম। ওই গ্রামের বাসিন্দা অজিত রায়ের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল সোমবার। বাড়ি জুড়ে তৈরি হয়েছিল প্যান্ডেল। আত্মীয় স্বজনরাও আসতে শুরু করেছিলেন তাঁর বাড়িতে। কিন্তু এমন অবস্থায় অজিত রায় সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন। এমনকি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িতে আসা আত্মীয়দেরও।
এ দিন অজিতবাবু বলেন, ‘‘সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছি। গ্রামে একটি মন্দির রয়েছে সেখান থেকেই কোনও রকমে ওই বিয়েটা দেওয়া হবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। আজিমগঞ্জ এজি হাসপাতালে বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থাও। গোটা গ্রামে ওআরএস এবং ওষুধ দেওয়া হয়েছে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা থেকে জলের ট্যাঙ্কার করে আর্সেনিক মুক্ত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছানো হয়েছে কমলা পুস্করিণী গ্রামে। এ দিন মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলের জল পরীক্ষা করা হচ্ছে। গ্রামের বাসিন্দাদের এই মুহূর্তে গ্রামের কলের জল পান করতে বারণ করা হয়েছে।"
এদিন ডাহাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মাবের আলী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফেও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতন করছি। আমারও জল পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy