E-Paper

বিএসএফ-বেশে গুলি চালাল কে

শমসেরগঞ্জ থানা এলাকার জাফরাবাদে বাবা-ছেলের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে হইচইয়ের একেবারে আড়ালে রয়ে গিয়েছে ধুলিয়ান পুরসভার বস্তি-চেহারার কিছু এলাকা।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৭:২১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সরু, সর্পিল গলি কোথাও গিয়ে উঠেছে রাস্তার অন্য প্রান্তে। কোথাও শেষ হয়েছে অপ্রশস্ত বাড়ির দরজায় ধাক্কা খেয়ে। গলির কোনও বাঁকে দেওয়ালের তলার দিক ঘেঁষে বুলেটের দাগ। কোনও বাড়ির জানলার নীচে বুলেটের ক্ষত। কোথাও আবার টিউবওয়েলের হাতলের নীচে একই চিহ্ন।

নিষ্প্রাণ ইট-কাঠে বারুদের দাগ পাশ কাটিয়ে প্রায়ান্ধকার বাড়িগুলোর ভিতরে ঢুকলে আরও শিউরে ওঠার মতো ছবি। গুলির ক্ষতে ব্যান্ডেজ বেঁধে বিছানায় শুয়ে তরতাজা ছেলেরা। তাঁদের ঘিরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রহর গুনছেন বাড়ির বাকিরা। ওয়াকফ আইন কী বস্তু, এঁরা কেউ বোঝেন না। শুধু জানেন, আচমকা কিছু বুলেট তাঁদের জীবন ফুঁড়ে দিয়ে গিয়েছে!

শমসেরগঞ্জ থানা এলাকার জাফরাবাদে বাবা-ছেলের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘিরে হইচইয়ের একেবারে আড়ালে রয়ে গিয়েছে ধুলিয়ান পুরসভার বস্তি-চেহারার কিছু এলাকা। ধুলিয়ানের ৩, ৪, ৭, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ছড়িয়ে থাকা এই ঘিঞ্জি তল্লাটে ঘুরলে সন্ধান মিলছে অন্তত ১২ জন গুলিবিদ্ধ কিশোর ও যুবকের। কলকাতা-সহ এলাকার বাইরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের ধরলে সংখ্যাটা ১৭, এমনই দাবি বাসিন্দাদের। স্থানীয় লোক চিনিয়ে না দিলে যে পাড়ার গলিতে ঢুকে বেরিয়ে আসা কঠিন, সেখানে এসে গুলি চালিয়ে চলে গেল কারা? মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তির ঘটনার তিন সপ্তাহ পরেও এই প্রশ্নের উত্তর ধোঁয়াশায় ঢাকা!

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদে এসে বলে গিয়েছেন, ‘‘বিএসএফ গুলি না-চালালে পরের দিনের ঘটনা ঘটত না, আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’’ আনন্দবাজারের সরেজমিন পরিদর্শনে অবশ্য স্থানীয় মানুষ সমস্বরে জানাচ্ছেন, জাফরাবাদে বাবা-ছেলের খুনের ঘটনা হয় যে ১২ এপ্রিল, সেই দিনই ধুলিয়ানের এই এলাকায় গুলি চলেছে। গুলি চালাল কারা? আহত এবং তাঁদের বাড়ির লোক, সকলের দাবি— বিএসএফের পোশাক গায়ে কিন্তু পায়ে চটি পরিহিত কিছু লোক পাড়ার মধ্যে এসে গুলি চালিয়েছে। তাঁদের দাবি, ওই এলাকায় তখন কোনও গোলমাল হচ্ছিল না। পুলিশ বা কোনও বাহিনীর গাড়িই তাঁরা দেখেননি। কাছাকাছি কোথাও মিছিল হচ্ছে, গোলমাল হচ্ছে খবর শুনে রাস্তায় ভিড় করা লোকজনের উপরে গুলি করে চলে গিয়েছে বন্দুকধারীরা।

শমসেরগঞ্জ থানা এলাকার মধ্যে ধুলিয়ানের তারবাগান, কামাত, নতুনবাজার, হাতিচিত্রা, লক্ষ্মীনগরে গুলির আঘাত শরীরে নিয়ে জবাব হাতড়াচ্ছেন গোলাম মইনুদ্দিন শেখ, মহম্মদ হাসান শেখ, সুজাউদ্দিন শেখ, ইদ্রিস শেখ, সুমিত মহালদার, ইব্রাহিম মোমিন, মাসুম মহালদার, রাজীব শেখ, ইনসান মহালদার, আখতারুল মহালদার, হাসান রাজা, রমজ়ান (রাজা) মহালদারেরা। হাতিচিত্রার রমজ়ান বলছেন, ‘‘আমাদের এক আত্মীয়ের দোকানে কাজ করি। আশেপাশে গোলমাল হচ্ছে শুনে দোকান গোটাচ্ছিলাম। তখনই গুলি এসে পায়ে লেগেছে।’’ ইনসানের বাঁ পা ফুঁড়ে গুলি বেরিয়ে গিয়েছে। সেই পায়ে এখন সংক্রমণ ধরেছে। চিকিৎসার খরচ জোগাতে বাড়ির লোক চাঁদা তুলছেন। কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি সমসের নাদাবের কোমরে লেগেছিল গুলি। বুলেট বেরিয়ে গেলেও দু’পা নাড়ানোর ক্ষমতা তাঁর এখনও ফেরেনি। সমসেরের জামাইবাবুর দাবি, ‘‘ও তখন ছাদে ছিল। বিএসএফের পোশাকে কয়েক জন গুলি চালায়, গুলি লেগে সমসের পাশের টালির চালে পড়ে যায়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Samsherganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy