প্রতীকী ছবি।
তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি ও চাল কল থেকে আয়কর দফতরের নগদ ১১ কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় সুতি, জঙ্গিপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বিড়ি মহল্লায় উদ্বেগের পাশাপাশি চিন্তাও ছড়িয়েছে।
বুধবার সুতি, শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে একই সঙ্গে তৃণমূলের বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি, কারখানা সহ ৪ বিড়ি ব্যবসায়ীর ১৪টি জায়গায় হানা দেয় আয়কর দফতর। সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরা টোপে সাড়ে ১০ ঘণ্টা ধরে এই তল্লাশি চলে। জঙ্গিপুরের চালকলে এই তল্লাশি চলে গভীর রাত পর্যন্ত। চাল কলে মেলে প্রায় ৯ কোটি টাকা। বাড়িতে ২ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের পরও মুর্শিদাবাদে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি আয়কর দফতরের কোনও কর্তা। তল্লাশি সেরে কলকাতায় ফিরে আয়কর দফতর উদ্ধার হওয়া টাকা কোথায় কি অবস্থায় রাখা ছিল তার ছবি সহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জাকিরের বাড়ি ও কারখানা থেকে মিলেছে হিসেব বহির্ভূত ১১ কোটি টাকা।
নব্বইয়ের দশকে এক সময়ে কোনও রকমে দিন চলত জাকিরদের চার ভাইয়ের। এই অবস্থায় দিল্লিতে বিড়ি সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেন জাকির। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন তিনি কোটিপতি। বিড়ির পাশাপাশি শুরু করেন সর্ষের তেল, চাল, ময়দা, পাট, ডাল কারখানার সঙ্গে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। অরঙ্গাবাদ থেকে সারা জেলা জুড়েই তার ব্যবসা প্রসারিত হতে থাকে। প্রণব মুখোপাধ্যায় জঙ্গিপুরে লোকসভার প্রার্থী হলে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে তাঁর সঙ্গে। ২০১৫ সালে রাজনীতিতে আসেন জাকির।
বিজেপির উত্তর মুর্শিদাবাদের সভাপতি ধনঞ্জয় ঘোষ বলেন, “ এই সব নগদ টাকা রাখা হয়েছিল মূলত আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের হয়ে কাজে লাগাবার জন্য। এর ফলে নির্বাচনে বেআইনি টাকা ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। ইডিকে তদন্ত ভার দিতে হবে যাতে সমস্ত বেআইনি টাকার উৎস জানা সম্ভব হয়।”
২০১৬ সালে জাকির বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময় যে হলফনামা দাখিল করেন, তাতে তাঁর বার্ষিক পারিবারিক আয় ছিল ১.৮৯ কোটি টাকা, মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি। পাঁচ বছর পরে ২০২১ সালে আয় দাঁড়ায় ১১.৬৪ কোটি টাকারও বেশি, সম্পত্তি গিয়ে দাঁড়ায় ৬৭ কোটি টাকার কিছু বেশিতে।
বিজেপির ধনঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘বিপুল পরিমাণ আয় ও সম্পত্তি বেড়েছে এই বিধায়কের। এর প্রকৃত তদন্ত করতে পারে কেবল ইডি।’’ যদিও জাকিরের বক্তব্য, ‘‘আমার ব্যবসা বেড়েছে, আমি সেই মতো আয়করও জমা দিয়েছি। এর মধ্যে গোপনীয়তা বা বেআইনি কিছু নেই।’’ জঙ্গিপুরের তৃণমূল সভাপতি খলিলুর রহমান নিজেও বড় বিড়ি ব্যবসায়ী। জাকিরের বাড়ি থেকে নগদ উদ্ধারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা আয়কর দফতর ও জাকিরের ব্যাপার। দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে বিজেপির কথার উত্তর দেব না।”
জাকিরের দাবি, “আয়কর চালকলে হানা দিয়ে যে টাকা পেয়েছে তার সমস্ত টাকাটাই ধানচাষি ও মজুরদের টাকা। কৃষি ক্ষেত্রে সবটাই লেনদেন হয় নগদে। এর ফলে মজুরি ও ধানের দাম চাষিরা যদি নগদে না পায় তা হলে বিক্ষোভ দেখাতে পারে। এ রকম চললে মজুরদের নগদে মজুরি দেওয়া উঠে যাবে। আমার বাড়িতে ছিল সামান্য কিছু টাকা নিরাপত্তার কারণে। সব হিসেবের টাকা।
তিনি বলেন, ‘‘এই টাকার নথিও দেখানো হয়েছিল। কিন্তু আয়করের আধিকারিকেরা তা মানেননি। চাষি ও মজুররা বেশির ভাগই অশিক্ষিত মানুষ। এই নগদ কারবার যদি বন্ধ হয়ে যায় তাঁরা বিপদে পড়বেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy