Advertisement
E-Paper

ছেলে হারিয়ে জবু বিবি এখন ১৩৬ পড়ুয়ার মা

মহিলা তেড়ে ওঠেন, ‘‘যা, শিগগির পালা... কড়াইয়ের আঁচ থেকে যত দূরে থাকবি ততই মঙ্গল।’’ বিড় বিড় করে চলেন জবু বিবি, ‘‘দেখলি না এই উনুনই গিলে খেল মঙ্গলকে, এর কাছে আসিসনি বাবা!’’

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৪:৩৮
রাঁধাবাড়া: রাজাপুর স্কুলে জবু বিবি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

রাঁধাবাড়া: রাজাপুর স্কুলে জবু বিবি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

ঢাউস উনুনে গব গব করে ফুটছে, আলু-ঝিঙে-চিচিঙ্গার আটপৌরে তরকারি।

নেড়া মাঠটা যেখানে শেষ হয়েছে, খড়-খাপলার মামুলি পাঁচিল তুলে স্কুলের একচালা রান্নাঘরটা সেখানেই। ক্লাশ-ছুট ছেলেটা মুখ বাড়িয়েছিল সেখানেই, ‘‘ও পিসি রান্না হয়েছে?’’

মহিলা তেড়ে ওঠেন, ‘‘যা, শিগগির পালা... কড়াইয়ের আঁচ থেকে যত দূরে থাকবি ততই মঙ্গল।’’ বিড় বিড় করে চলেন জবু বিবি, ‘‘দেখলি না এই উনুনই গিলে খেল মঙ্গলকে, এর কাছে আসিসনি বাবা!’’

এক মঙ্গলকে হারিয়ে এখন তিনি ১৩৬ মঙ্গলের মা। নাকাশিপাড়া রাজাপুর প্রাথমিক স্কুলের রাঁধুনি জবু বিবির হাতে এখন সক্কলের ভাত-চচ্চড়ি-ডিমের ডালনার ভার। ঝাল হলে জিভ কেটে বলেন, ‘ইস খুব ভুল হয়ে গেছে রে বাবা!’ আর জবু পিসির রান্না ভাল হলে, ছেলেপুলেরা যখন হাপুস হুপুস করে পাত
হাতড়ায় তখন রান্নাঘরে চোখ মোছেন তিনি, ‘‘সবাই রইল, শুধু মঙ্গলটাই থাকল না গো!’’

বছর চারেক আগে, এক জুলাই মাসের দুপুরে খিদে পেয়ে গিয়েছিল ছেলেটার। এক লাফে স্কুলের ওই রান্নাঘরে গিয়ে পা হড়কে সটান ফুটন্ত তরকারির কড়াইয়ে পড়ে ছিল সে। ঝলসে যাওয়া বছর পাঁচেকের মঙ্গলকে নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জেলা হাসপাতাল এবং কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল— ছোটাছুটি কম হয়নি। লাভ হয়নি, দগ্ধ শরীরটা নিয়ে এক রত্তি ছেলেটা তেমন লড়াই দিতে পারেনি। মারা গিয়েছিল দিন কয়েকের মধ্যেই।

স্কুলের সামনে তা নিয়ে বিক্ষোভও কম হয়নি সে সময়ে। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে গিয়েছিল রাধুনিকে। ছেলেমেয়েদের দেখভালের গাফিলতির দায়ে বদলি করা হয়েছিল তিন শিক্ষককে। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়।

তবে, মাস কয়েক পরে স্কুল খুলল বটে, কিন্তু মিডডে মিলের রাধুনি কোথায়? অভিভাবকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, পুরনো রাঁধুনির হাতে রান্না খাবে না পড়ুয়ারা। তা হলে?

প্রধান শিক্ষক সঞ্জিত বিশ্বাস বলছেন, “হঠাই মনে হয়েছিল, মঙ্গলের মা’কে বললে কেমন হয়!’’ জবু বিবিকে রাজি করাতে অবশ্য কাঠখড় কম পোড়াতে হয়নি। সঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘এক দিন গিয়ে বোঝালাম, তুমি না রাঁধলে ছেলেমেয়েগুলো খাবে কি!’’ ছেলের কথা ভেবেই বুঝি মন ভিজেছিল জবু বিবির। সেই থেকে ১৩৬টা পড়ুয়ার রাঁধাবাড়ার পাশাপাশি তাদের দেখভালও করেন মহিলা।

রান্নাঘরের দাওয়ায় ঠেস দিয়ে জবু বলছেন, ‘‘প্রথম প্রথম স্কুলের হেঁশেলে ঢুকলেই মনে হত, ছেলেটা বুঝি কড়াইয়ে ফুটছে! অনেক কষ্টে নিজেকে শক্ত করেছি বাচ্চাগুলোর মুখ চেয়ে।এখন আমি ওদের সক্কলের মা!’’ আঁচলের খুঁটে ফের চোখ মোছেন জবু বিবি।

Jobu bibi Cook Midday meal School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy