Advertisement
E-Paper

সারা পথে একবার ভাত-ডাল খেয়েছি

বাড়ির উঠোনে হাসি ফোটাতে বাড়তি রুজির হাতছানিতে ওঁদের ঠিকানা ভিন প্রদেশে। কিন্তু লকডাউনের অনুশাসনে  রুজি তো গেছেই ঘরে ফেরাও ঝুলে ছিল সুতোর উপরে। দুর্বিষহ সেই প্রবাস কিংবা অনেক লড়াইয়ের পরে ফিরে আসার সেই গল্প বলছেন পরিযায়ী শ্রমিকেরা, শুনল আনন্দবাজার করোনা ভাইরাসের নাম কুঠি মালকিনের কাছে প্রথম শুনি। লকডাউন কি, তা জানতাম না।

কাঞ্চনা হালদার

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২০ ০৪:২৬
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ফরাক্কার জাফরগঞ্জ আমাদের বাড়ি। যদিও গত ছ’বছর ধরে আমার ঠিকানা নয়ডা, দিল্লি। সেখানে আমি এক কুঠি বাড়িতে বাবুদের রান্না করাই মূলত আমার কাজ ছিল। সেখানেই থাকতাম, তার জন্য ভাড়া গুনতে হত না। মাস মাইনে ভালই। স্থানীয় অনেকেই দিল্লিতে কাজ করেন। তাই ভয় ছিল না।

করোনা ভাইরাসের নাম কুঠি মালকিনের কাছে প্রথম শুনি। লকডাউন কি, তা জানতাম না। প্রথম লকডাউন শুরু হওয়ার সময় মালকিন বললেন, এখন আর কাজ করতে হবে না। কাজের লোকদের ছুটি দিয়ে দিলেন। রান্নার জন্য শুধু আমি থাকলাম। যাঁদের কাজ থেকে ছুটি মিলল তাঁরা দিল্লির বস্তিতে থাকেন, সেখানে চলে গেলেন। দ্বিতীয় লকডাউনের শুরু হওয়ার দু’দিন আগে আমাকেও কাজ থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হল। এ বার আমি কী করব! আমার তো থাকার বাসা নেই। থাকার জন্য ঘর কেউ ভাড়া দিচ্ছে না। শেষে আমার ঠাঁই হল এক বস্তিতে। সেখানে যে কি কষ্ট বোঝানো যাবে না। খাবার নেই, বাজার বন্ধ। মুদির দোকানে চাল, আলু, আটার দাম আকাশ ছোঁয়া। আনাজ পাওয়া যায় না। খাবার পেতে হলে গুরুদুয়ারা যেতে হবে। আমাদের এখন থেকে গুরুদুয়ারা ভাড়া দশ টাকা, তা এখন পঞ্চাশ টাকা। তার উপর আছে পুলিশের হয়রানি। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়েছে। আমরা হঠাৎ শুনলাম দিল্লি থেকে ট্রেন ছাড়বে। নয়ডা থেকে এক জনের ভাড়া অটোতে তিনশো টাকায় এসে পৌঁছলাম রেল ষ্টেশন। সেখানে দেখি হাজার হাজর লোক। ট্রেন চলবে না। পুলিশ মারছে। মানুষ ছুটছে । দেখলাম মানুষ বাঁচার জন্য কত অসহায়। আমাদের ছয় জনের একটা দল ছিল। দেখলাম অনেকে হেঁটে তাদের বাড়ি যাচ্ছে। আমরাও ঠিক করলাম হেঁটে বাড়ি যাব। ঘাড়ে ব্যাগ হাতে জলের বোতল, এই নিয়ে হাঁটছি। মাথায় রোদ। এক দিন হাঁটার পর আর শরীর চলছে না। এমন সময় একটি ট্রাক পেলাম। ছ’জনের ভাড়া ছ’হাজার টাকা, তবু্ও ওড়িশা পর্যন্ত। সেখানে পৌঁছে পুলিশ আবার ঝামেলা পাকাল। আর এগোতে দেবে না। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে ফের হাঁটা শুরু হল। দিন-রাত হাটার পর সীমানা পেরিয়ে বাংলায় ঢুকলাম। সেখানেই, নাম জানি না, একটি গ্রামে আমাদের কথা শোনার পর তাঁরা দুপুরে ভাত-ডাল খেতে দিলেন। সারা পথে ওই একবাই ভাত-ডাল খেয়েছি। মেদিনীপুর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে আসি। তার পর আবার একটি লরিতে কলকাতা। কলকাতা থেকে ছোট গাড়িতে বহরমপুর। সেখান থেকে আবার দুধের গাড়িতে ফরাক্কা পৌঁছলাম। যতটা সহজে বললাম, ঠিক ততটাই কঠিণ ছিল পথ। ততটাই কষ্টকর। তবে রুজির টানে লকডাউন শেষ হলে আবার ফিরে যাব দিল্লি।

MIgrant worker Farakka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy