Advertisement
E-Paper

খামে ভরা টাকা নিয়ে কালীগঞ্জে নিহত তমন্নার বাড়িতে তৃণমূল বিধায়ক, ফিরিয়ে দিয়ে মায়ের চিৎকার, ‘না, না, না’

বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীগঞ্জে তমন্নার বাড়িতে গিয়েছিলেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন কবীর। মৃতার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন তিনি। শোনেন তাঁদের অভিযোগ। কিন্তু তাঁর দেওয়া টাকা নেয়নি পরিবার।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ২২:০৩
নদিয়ার কালীগঞ্জে তমন্না খাতুনের বাড়িতে ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার।

নদিয়ার কালীগঞ্জে তমন্না খাতুনের বাড়িতে ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র।

নদিয়ার কালীগঞ্জে বোমার আঘাতে নিহত নাবালিকা তমন্না খাতুনের বাড়িতে গিয়েছিলেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। নিহতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টাকা নেননি তমন্নার মা সাবিনা বিবি। বরং দোষীদের শাস্তি চেয়েছেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা নেওয়ার মতো কেউ তাঁর বাড়িতে নেই। তাঁর বাড়ি আছে, জমি আছে, টাকার প্রয়োজনও নেই। তিনি শুধু মেয়ের খুনিদের শাস্তি পেতে দেখতে চান।

কালীগঞ্জে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ কেন এক বারও তাঁদের বাড়িতে এসে দেখা করলেন না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন। তমন্নার মায়ের অভিযোগ, তাঁরা সিপিএম করেন বলেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে তাঁদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে। প্রাণ চলে গিয়েছে ১০ বছরের বালিকার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীগঞ্জে তমন্নার বাড়িতে গিয়েছিলেন প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন। মৃতার মায়ের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ কথা বলেন তিনি। শোনেন তাঁদের অভিযোগ। তৃণমূল নেতার সামনে নানা অভিযোগের কথা কাঁদতে কাঁদতে জানাচ্ছিলেন সাবিনা। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা তো কোনও দুর্ঘটনা নয়। কী ভাবে দুর্ঘটনা হবে? দুর্ঘটনা হলে তো হাতে বা পায়ে বা অন্য কোথাও লাগত। একেবারে বুকের মাঝে বোমা লাগল কী ভাবে? আমার মেয়ের বুকে বোমা লেগেছে, আমি নিজের চোখে সেটা দেখেছি। আমি জানতে চাই, ওই বোমা কেন উদ্ধার করা হল না?’’ ভোটের পর এমন কিছু ঘটতে পারে, আগে থেকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সাবিনা। বলেছেন, ‘‘আগে থেকে ওয়ার্নিং দেওয়া ছিল। ভোটে জিতলে সিপিএমকে একেবারে শেষ করে দাও।’’

ভোটের আগে তৃণমূল প্রার্থী তাঁদের পাড়ায় এসেছিলেন, জানিয়েছেন সাবিনা। তাঁকে দেখতে দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ছোট্ট তমন্না। মায়ের হাহাকার, ‘‘আমার মেয়ে কি জানে ও লালের মেয়ে, ও অন্য পার্টি, সে অন্য পার্টি? ও তো দেখতে গিয়েছিল। মেলা লোক হয়েছে, ও দেখতে গিয়েছে। আমাকেও টেনে নিয়ে গিয়েছিল।’’ বলতে বলতে গলা ধরে আসে সাবিনার। এর পরেই একটি কমলা রঙের খাম বার করেন হুমায়ুন। জানান, খামে তাঁর ফোন নম্বর লেখা আছে। আছে কিছু টাকা। টাকার কথা শুনেই চিৎকার করে ওঠেন তমন্নার মা। খামের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, ‘‘কিসের জন্য? কিসের জন্য? এ রকম কথা আমাকে বলবেন না। না না না। এ রকম করবেন না। একদম না। আমি টাকা চাই না। আমার জমি আছে। বাড়ি আছে। আমার দরকার নেই।’’

হুমায়ুন জানান, তিনি রাজনৈতিক নেতা হিসাবে কোনও দলের পক্ষ থেকে এই অর্থসাহায্য করতে আসেননি। তাঁর আলাদা একটি অরাজনৈতিক সংগঠন রয়েছে। সেখান থেকে এই টাকা দিতে চান। কিন্তু তা-ও অর্থ প্রত্যাখান করে তমন্নার পরিবার। তারা জানায়, তাদের টাকা নেওয়ার মতো কেউ নেই। জয়ী তৃণমূল প্রার্থী এক বারও বাড়িতে আসেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তমন্নার মা। বলেন, ‘‘তিনি কিন্তু এক বারও এলেন না। কেন এলেন না? আসার দরকার নেই!’’

প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা আলিফাকে কালীগঞ্জের বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। গত ১৯ জুন ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়। গণনা হয় সোমবার, ২৩ তারিখ। গণনা শেষ হওয়ার আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, তৃণমূল প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হতে চলেছেন। ফলে আগেই বিজয়মিছিল বার করেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, একটি বিজয়মিছিল থেকে বোমা ছোড়া হয় সিপিএম কর্মীদের বাড়ি লক্ষ্য করে। সকেট বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় বছর দশেকের তমন্নার।

সোমবার বিকেলেই সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেন জয়ী তৃণমূল প্রার্থী আলিফাও। তিনিও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Kaliganj Nadia TMC CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy