যে পিস্তল দিয়ে কৃষ্ণনগরে বছর উনিশের ঈশিতা মল্লিককে খুন করা হয়, সেটি উত্তরপ্রদেশ থেকে আনা বলে পুলিশের সন্দেহ। প্রথমে অনুমান করা হচ্ছিল, কাঁচরাপাড়ার পানশালায় কোনও দুষ্কৃতীর কাছ থেকে সেটি জোগাড় করা হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত দেশরাজ সিংহের সমবয়সি খুড়তুতো ভাই নিতিনপ্রতাপ সিংহের কলকাতায় আসার কথা জেনে তদন্তকারীদের ধারণা বদলেছে। সেই সঙ্গে মিলেছে চারটি সিম কার্ডের সূত্র।
গত ২৫ অগস্ট, সোমবার কৃষ্ণনগরে মাথায় তিনটি গুলি করে খুন করা হয় ঈশিতাকে। পরে দেশরাজ তাঁকেও গুলি করার চেষ্টা করে বলে ঈশিতার মা কুসুম মল্লিক পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন। অথচ, ছেলেকে গোরক্ষপুর যাওয়ার ট্রেনে ২৪ অগস্টের টিকিট কেটে দিয়েছিলেন দেশরাজের বাবা, বিএসএফ জওয়ান রঘুবিন্দরপ্রতাপ সিংহ। তিনিই সংবাদমাধ্যমকে সেই টিকিটের ছবি দেন এবং ছেলে ট্রেনে উঠে পড়ার কথাও তাঁকে ফোনে জানিয়েছিল বলে দাবি করেন। সে দিন দেশরাজ ‘গ্রুপ ভিডিয়ো কল’ করে ঈশিতা-সহ কয়েক জন বন্ধুকেও জানিয়েছিল, দুপুরের ট্রেনে সে দেশে ফিরে যাচ্ছে। পুলিশের সন্দেহ, দেশরাজের বদলে নিতিন সেই টিকিট নিয়ে গোরক্ষপুরে ফিরেছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, গত ১৯ অগস্ট অসংরক্ষিত কামরায় চেপে নিতিন গোরক্ষপুর থেকে আসে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহের ছেলে হলেও, তার নামে খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের অনুমান, খুনে ব্যবহৃত দেশি সেভেন এমএম পিস্তল সে-ই দেশরাজকে এনে দেয়। কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “রেলের কাছে তথ্য চেয়েছি।”
চারটি মোবাইল সিম কার্ডও এই তদন্তে বড় সূত্র বলে পুলিশের দাবি। প্রথম সিমটি ২০১৮ সাল থেকে ব্যবহার করত দেশরাজ। গত ১৩ অগস্ট থেকে সেটি আর ব্যবহার হয়নি। ঘটনাচক্রে, সে দিনই তার মা পুনম সিংহ কাঁচরাপাড়ার ভাড়াবাড়ি থেকে গোরক্ষপুরের কাছে দেওরিয়ার দেশের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। দ্বিতীয় সিমটি দেশরাজ বেশ কয়েক দিন ব্যবহার করছিল। এই নম্বর থেকে রবিবার সে ‘গ্রুপ ভিডিয়ো কল’ করে। খুনের দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কল্যাণী স্টেশনের কাছে সেটির শেষ ‘টাওয়ার লোকেশন’ পাওয়া যায়। সেটি কোথায়, তা এখনও অজানা। তৃতীয় সিমটি খুনের আগের দিন জোগাড় করে দেশরাজ। সেটি নিয়ে সে কৃষ্ণনগরে গিয়েছিল। ঈশিতা খুন হওয়ার পরে সেই নম্বর থেকে পুনম আর নিতিনের কাছে ফোন যায়। পুলিশের দাবি, সেই সিম-সহ ফোন দেশরাজ বরাকর স্টেশনের কাছে ফেলেছিল। তা উদ্ধার হয়েছে।
চতুর্থ সিমটি দিন কুড়ি আগে নিতিনের মূক-বধির ভাই অনুরাগপ্রতাপ সিংহের নামে তোলা হয়। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নিজের সিমের বদলে সেটি নিয়েই নিতিন কলকাতায় আসে। ফলে, তার নিজের সিমের ‘টাওয়ার লোকেশন’ বদলায়নি। অনুরাগের কাছে গিয়ে পুলিশ জেনেছে, সেটি তার কাছে নেই। নিতিনের সঙ্গে সেটিও বেপাত্তা। কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার সুপার বলেন, “অন্তত দু’সপ্তাহ ধরে ঠান্ডা মাথায় খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পাকা মাথার যোগ আছে বলেই মনে হচ্ছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)