Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মহিলা শৌচাগার বন্ধ, বেকায়দায় রোগিণীরা

হাসপাতাল আউটডোর আছে। আউটডোরে লম্বা লাইন আছে। লাইনে মহিলারা আছেন। মহিলাদের জন্য শৌচাগার নেই। ভুল হল, শৌচাগার আছে। কিন্তু গত দশ বছর ধরে তা বন্ধ পড়ে রয়েছে।

বাথরুমে তালা। নিজস্ব চিত্র।

বাথরুমে তালা। নিজস্ব চিত্র।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৩২
Share: Save:

হাসপাতাল আউটডোর আছে।

আউটডোরে লম্বা লাইন আছে। লাইনে মহিলারা আছেন।

মহিলাদের জন্য শৌচাগার নেই। ভুল হল, শৌচাগার আছে। কিন্তু গত দশ বছর ধরে তা বন্ধ পড়ে রয়েছে।

ফলে, যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। নওদার আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে আউটডোরে দেখাতে এসে দিনের পর দিন নাকাল হচ্ছেন মহিলারা।

সোমবার তুমুল হইচই হওয়ায় তা সামনে এসে গেল, এই যা!

এ দিন মহম্মদপুর গ্রাম থেকে এসে আউটডোরে লাইন দিয়েছিলেন বছর আটচল্লিশের জাহান্নারা বিবি। ব্লাড সুগারের রোগী তিনি। মাঝে-মাঝেই শৌচালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। বেলা ১২টা নাগাদ তেমনই তাগিদে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মহিলা শৌচালয় তালাবন্ধ।

কী করবেন তা বুঝতে না পেরে একে-ওকে বলতে থাকেন জাহানারা। হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ‘গণ অধিকার রক্ষা মঞ্চ’ নামে একটি স্থানীয় সংগঠনের যুবকেরা। তাঁরা বিষয়টি শুনে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা মেডিক্যাল অফিসার প্রেমাংশু চট্টোপাধ্যায়কে গিয়ে জানান। তিনি বলেন, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) মুকেশ সিংহ ছুটিতে রয়েছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত শৌচাগার খোলা যাবে না। যুকেরা চাপ দিলে তিনি বিএএমওএইচ-কে বিষয়টি জানান। তার পরেও তালা খোলা হয়নি। প্রেমাংশুবাবু লিখিত ভাবে জানিয়ে দেন, বিএএমওএইচ-এর লিখিত অনুমতি না পেলে শৌচাগার খোলা যাবে না। তিনি মঙ্গলবার এসে যা করার করবেন।

দুপুর আড়াইটে নাগাদ জাহানারা বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন। তাঁর কথায়, ‘‘ব্লাড সুগারের রোগী বলেই আমার বেশি সমস্যা। আমি দরজা খোলার কথা কয়েক জনকে বললাম, কিন্তু কেউই কোনও গুরুত্ব দিল না। কয়েকটা ছেলে খুব চেষ্টা করল। কিন্তু দরজা খোলানো গেল না।’’

কেন বন্ধ মহিলাদের শৌচাগার? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেটির সেপটিক ট্যাঙ্ক খারাপ থাকায় বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। তাই তা খোলা যাবে না। ‘গণ অধিকার রক্ষা মঞ্চ’র সম্পাদক তথা নওদা হাইস্কুলের শিক্ষক সৈয়দ সাবির আহমেদ মির বলেন, ‘‘আমরা দেখতে চেয়েছিলাম, শৌচাগারের কেমন অবস্থা। কিন্তু তা তো খোলানোই গেল না! ’’

গত দশ বছরে কেন সারানো গেল না সেপটিক ট্যাঙ্ক? হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কী ভাবে এত দিন বন্ধ পড়ে রয়েছে মহিলাদের শৌচাগার? উত্তর মেলেনি। বারবার ফোন করা হলেও বিএমওএইচ তা ধরেননি। মেসেজেরও জবাব দেননি।

স্থানীয় নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাহাবুদ্দিন মোল্লার বক্তব্য, ‘‘আমরা ওই গ্রামীণ হাসপাতালে দু’টো শৌচাগার করে দিয়েছি। তার একটি মহিলাদের। তার পরেও কেন এটা হল, তা আমার বোধগম্য নয়।’’ তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শৌচাগার দু’টি জরুরি বিভাগের। আউটডোরের রোগীদের সেখানে যেতে দেওয়া হয় না।

আউটডোরের মাত্র তিনটে ঘর পরেই জরুরি বিভাগ। আউটডোরে মহিলা শৌচাগার যত দিন খারাপ হয়ে পড়ে আছে, রোগিণীদের জরুরি বিভাগের শৌচালয়ে যেতে দেওয়া হয় না কেন? এ দিন যখন ব্লাড সুগারের রোগিণী কষ্ট পাচ্ছেন, শৌচাগার খুলে দেওয়ার জন্য একে-তাকে ধরছেন, নিয়মের ওজর না তুলে তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হল না কেন?

কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শুভাশিস সাহা রাতে দাবি করেন, নওদা হাসপাতালে যে দশ বছর ধরে আউটডোরের মহিলা শৌচাগার বন্ধ, তা তাঁর জানা ছিল না। তবে তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই গুরুতর সমস্যা, সন্দেহ নেই। হাসপাতালের এটা হবেই বা কেন? খোঁজ নিচ্ছি। যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ladies toilet Hospital beldanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE