শুনশান ভগবানগোলার সরকারপাড়া। নিজস্ব চিত্র
থমথমে হয়ে রয়েছে গোটা পাড়া। মাঝে-মাঝেই কান্নার রোল উঠছে বাড়ি থেকে। পাড়ার মোড় থেকেও শোনা যাচ্ছে সেই আওয়াজ। গ্রাম পাহারায় থাকা সিভিক ভলান্টিয়ারের দল সেই আওয়াজ পেয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে গ্রামের ভেতরদিয়ে যাওয়া পিচরাস্তায় পায়চারি করতে থাকেন। অস্বস্তি কোথাও যেন তাঁদের মনে বিঁধছে কাঁটার মতো!
মঙ্গলবার বড় ছেলে মহাতাব শেখকে সঙ্গে করে ভোট দিতে গিয়েছিলেন এলাকার কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখ। সেখানেই ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে তৃণমূলের লোকজনকে ছাপ্পা ভোট দিতে দেখে প্রতিবাদ জানান শুধু নন, বাধাও দেন তাদের। তাতেই তৃণমূলের লোকজনের যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়ে টিয়ারুলের উপরে। কেরলে রাজমিস্ত্রি হিসেব কর্মরত মহাতাব বলছেন, ‘‘ছ’বছর আগে আমার সচিত্র ভোটার কার্ড হয়েছে। কিন্তু বাইরে থাকার কজন্য কোনও বার ভোট দিতে আসতে পারিনি। এ বারই প্রথম ভোট দিলাম। ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে দেখি বাবাকে ঘিরে ধরে তৃণমূলের লোকজন মারধর করছে।’’
বাধা দিতে গেলে মহাতাবকেও সজনে ডাল দিয়ে মারধর করে। বুধবারও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সেই দাগ রয়ে গিয়েছে। মহাতাব বলছেন, ‘‘আচমকা হাঁসুয়া নিয়ে কামারুল যে এ ভাবে বাবার উপরে চড়াও হবে, বুঝতে পারিনি। বাবাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি। এই আক্ষেপ কোনও দিন যাবে না।’’
মহাতাব বলছেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে আসব ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাদের এখানে ভোট হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় এ বার প্রথম ভোট দিতে এলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় ভোট দিয়ে গিয়ে বাবার মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। সমস্ত ঘটনার সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী চুপ করে ঘরে বসে থাকল। এ রকমটা হলে মানুষ কোন ভরসায় ভোট দিতে যাবে।’’ ঘটনার পরেই অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ জমা পড়ে রানিতলা থানায়। দু’পক্ষের মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের এ দিন আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক খুনের মামলায় জড়িত তিন জনের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত দিয়েছেন। বাকিদের জেলা হেফাজত হয়েছে। পুলিস সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘এলাকায় পুলিশি টহল চলছে। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।’’
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, কামারুল শেখ এক সময়ে সিপিএম করত। পরে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিল। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় ফের দল বদলে তৃণমূলে যোগ দেয়। তখনই টিয়ারুলকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করে। কিন্তু টিয়ারুল তৃণমূলে যোগ দেননি।
এ দিন সকালে ওই কংগ্রেস কর্মীকে গ্রামে সমাধিস্থ করা হয়েছে। সেই সময়ে ভগবানগোলা-২ ব্লকের বালিগ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারপাড়ায় হাজির চিলেন মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস প্রার্থী আবু হেনা, ভগবানগোলার বিধায়ক সিপিএমের মহসিন আলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy