সভামঞ্চ থেকে কাটমানি নিয়ে যে কড়া অবস্থানের কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে ছিলেন, সভার শেষে মঞ্চের পাশে জেলার বিধায়ক, সাংসদ ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে সেই একই কথা আবার বললেন।
সোমবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ শহরের নবাব বাহাদুর’স ইনস্টিটিউশনের মাঠে প্রকাশ্য সভায় মমতা বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে কেউ যদি এক টাকাও চায় দেবেন না। এটা সরকারের টাকা। এই টাকা নেওয়ার অধিকার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত বা কারও নেই। যদি টাকা নেয় থানায় ডায়েরি করবেন। যদি থানা অভিযোগ না নেয় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন।’’
সেই কর্মসূচি শেষে দলের বিধায়ক, সাংসদ এবং পুরপ্রধানদের নিয়ে একটি বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ইস্যুতে আরও কঠোর বার্তা দিলেন। সূত্রের খবর, সেই বৈঠক মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, জেলার বেশ কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আবাস যোজনার উপভোক্তাদের কাছে থেকে পাঁচ হাজার, দশ হাজার, পনেরো হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে, টাকা চাওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁর কাছে সেই তালিকা রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন। সূত্রের খবর, রেজিনগরের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম করে সেই এলাকায় আবাসের জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন। তৃণমূল সূত্রেরই দাবি, নওদা-সহ আর কয়েকটি ব্লকে আবাসের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে বলে ওই বৈঠকে বলা হয়।সূত্রের খবর, তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যারা আবাসের উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। এফআইএর করে গ্রেফতার করা হবে, পদ কেড়ে নেওয়া হবে।
বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি প্রকল্পের জন্য কাউকে টাকা দিতে নিষেধ করেছেন। সেটাই আমাদের বৈঠকেও তিনি বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেছেন।’’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে দলের বৈঠকে দলের কিছু জনপ্রতিনিধি নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সূত্রের খবর, হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ মুখ্যমন্ত্রীকে নালিশ করেছেন, সাংসদ আবু তাহের খান এবং কলকাতার এক নেতা মুর্শিদাবাদে, বিশেষ করে তাঁর বিধানসভা এলাকায় ‘দলবাজি, গোষ্ঠীবাজি’ করছেন। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে লিখিত ভাবে তা জানাতে বলেছেন। বৈঠক শেষে আবু তাহের খান বলেন, ‘‘কে ভোট করেছে, কে ভোট করেনি তা দিদি ভাল জানেন। উনি (নিয়ামত) গুরুজন মানুষ। আমার বিরুদ্ধে কিছু বললে মুখের উপরে উত্তর দেওয়াটা ভদ্রতা নয়। তাই সেখানে কিছু বলিনি।’’ তাঁর নাম করে বিভিন্ন থানায় ফোন করে পুলিশের কাছে থেকে কোনও এক জালিয়াত সুযোগ সুবিধা চাইছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, জেলার বেশ কিছু ব্লকে দলের সমস্যা হচ্ছে। শীঘ্রই সেই সব ব্লক এবং জেলা কমিটিকে নিয়ে পর্যালোচনা হবে। বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘কিছু পঞ্চায়েত এলাকায় আবাস যোজনার নাম করে উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে, টাকা নেওয়া হয়েছে এমন তথ্য দিদির কাছে রয়েছে। দিদি বলেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে গ্রেফতার করানো হবে। কড়া পদক্ষেপ করা হবে। সেই সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলার কথা বলেছেন।’’ বহরমপুরের পুরপ্রধান নাডুগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহরমপুর পুর এলাকা লাগোয়া পঞ্চায়েতগুলিকে শহরের আওতায় আনার জন্য জেলাশাসকের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)