Advertisement
০৮ মে ২০২৪

গির্জার দরজায় নিথর দেহ, রক্তমাখা ছুরি আর হেলমেট

সকাল সাড়ে ছ’টায় প্রার্থনা। মিনিট পনেরো আগে প্রার্থনাগৃহ খুলতে যান জালালখালির সেন্ট লুই গির্জার ফাদার ভিনসেন্ট। দরজা খুলতেই চমকে যান তিনি। দরজার সামনে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত মৃতদেহ। সোমবার জালালখালির ঘটনা। নিহতের নাম বিশ্বজিৎ পাল (৪২)।

জালালখালি গির্জায় তদন্তে এসপি। ইনসেটে, দরজায় রক্তের দাগ।—নিজস্ব চিত্র

জালালখালি গির্জায় তদন্তে এসপি। ইনসেটে, দরজায় রক্তের দাগ।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

সকাল সাড়ে ছ’টায় প্রার্থনা। মিনিট পনেরো আগে প্রার্থনাগৃহ খুলতে যান জালালখালির সেন্ট লুই গির্জার ফাদার ভিনসেন্ট। দরজা খুলতেই চমকে যান তিনি। দরজার সামনে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত মৃতদেহ।

সোমবার জালালখালির ঘটনা। নিহতের নাম বিশ্বজিৎ পাল (৪২)। তাঁর বাড়ি কৃষ্ণনগরের ঘুর্ণি ঘরামিপাড়া এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে যায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, গলার শ্বাসনালি কেটে খুন করা হয়েছে তাকে। মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি হেলমেট, রক্তমাখা ছুরি ও বেশ কিছু খুচরো পয়সা। মৃতদেহের উপরে নারকেল গাছের শুকনো পাতা রাখা ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন জেলার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়াও। তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে হচ্ছে এর সঙ্গে গির্জার কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ঠিক কী কারণে এই খুন, তা এখনও পরিষ্কার নয়।”

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বজিৎ বিভিন্ন রাজ্যে গির্জাগুলোতে মূর্তি সরবরাহের ব্যবসা করতেন। কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন শিল্পীর কাছ থেকে মূর্তি গড়িয়ে তা গির্জায় দিতেন। আগে ছিলেন দর্জি। বছর পনেরো হল তিনি এই ব্যবসা করছেন। যদিও মাঝে এক বৃদ্ধাকে মারধর করার অভিযোগে বছর খানেক আগে তিনি মাস খানেক জেল খেটে আসেন। সে সময় জেলেই আলাপ হয় তন্ময় সাহা নামে এক যুবকের সঙ্গে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি তাহেরপুরের বীরনগর এলাকায়। রবিবার দুপুর তিনটে নাগাদ তার সঙ্গেই ব্যবসার কাজে বাড়ি থেকে বের হন বিশ্বজিৎ। তার পর আর ফেরেননি। সকালে তার ভাই ইন্দ্রজিৎ পাল গিয়ে মৃতদেহটি শনাক্ত করেন। স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগের তীর তন্ময়ের বিরুদ্ধে।

নিহতের স্ত্রী শম্পা পাল বলেন, “জেলে ওই যুবকের সঙ্গে আমার স্বামীর আলাপ হয়। আমাদের বলেছিল যে একটা অপহরণ মামলায় সে জেল খেটেছে। আরও বলেছিল যে সে একটি খ্রিস্টান মিশোনারিজ স্কুলে শিক্ষকতা করে। বার দুয়েক আমাদের বাড়িতে এসেওছে। ওই যুবক বলেছিল যে, তাহেরপুর গির্জা পাঁচ লক্ষ টাকার মূর্তি নেবে। এ দিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে থেকে অগ্রিম কিছু নেবে বলেও জানায় সে।” কিন্তু পরে জানা গিয়েছে, দু’জনের কেউই তাহেরপুর গির্জায় যায়নি। এমনকী দু’জনে যে মোটরবাইকে চেপে বেরিয়েছিল, সেটিরও সন্ধান মেলেনি।

রাতে বাড়ি না ফেরায় রাত দশটা থেকে বিশ্বজিতের মোবাইলে ফোন করতে থাকেন শম্পাদেবী। কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি। সকালেও রিং হয়ে যায়।

তবে এর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় উঠে আসছে তদন্তে। এলাকারই এক ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বজিৎ। ধরা পড়ে যাওয়ার অশান্তি শুরু হয়। পরে ওই মহিলার শাশুড়িকে মারধর করার অভিযোগেই জেল খাটতে হয়েছিল বিশ্বজিৎকে। শোনা যায়, জুয়ার নেশাও ছিল তার। খুনের পিছনে এমন কোনও সন্দেহও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।

তবে তদন্তকারীদের অনুমান, যে-ই খুন করে থাকুক না কেন, ওই গির্জায় তার যাতায়াত ছিল। কারণ কৃষ্ণনগর-রানাঘাট ভায়া বাদকুল্লা রাজ্য সড়কের পাশে ওই গির্জার সামনের মূল ফটক বন্ধ থাকে। পাঁচিলে ঘেরা গির্জার ভিতরে থাকে কোতোয়ালি থানার সিভিক ভলেন্টিয়ার। চার্চের পাশের দেওয়ালে একটা ঘোরানো লোহার গেট আছে। সেটা খোলা থাকে। চার্চে যাতায়াত না থাকলে সেই গেটের কথা জানা সম্ভব নয়। পুলিশের অনুমান, সেই গেট দিয়েই ভিতরে ঢুকেছিল আততায়ী। গির্জা কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, এর আগে তাঁরা কখনও বিশ্বজিৎকে দেখেননি। তন্ময় সাহা বলেও কারও সঙ্গে তাঁদের পরিচয় নেই। তাহেরপুরের ঠিকানাতেও ওই নামের কোনও যুবকের সন্ধান মেলেনি। ফলে আদৌ সে সঠিক পরিচয় দিয়েছিল কি না, তা নিয়েও সন্দিহান তদন্তকারীরা।

মূর্তি পাচার করতে এসে খুন নয় তো? উঠে আসছে এমন প্রশ্নও। কারণ শোনা যায়, প্রায় তিনশো বছরের পুরনো গির্জাটিতে বহুমূল্য প্রাচীন ভিনদেশি মূর্তি রয়েছে। যদিও পুলিশ জোর দিয়েই জানাচ্ছে, এই খুনের সঙ্গে হয়তো গির্জার কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar St. Louis church Slit Throat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE