দুই ছেলে, দুই বৌমা, নাতিনাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার। কিন্তু স্ত্রী মারা গিয়েছেন বছর কয়েক আগে। ওদিকে, শ্যালিকার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে কয়েক বছর হল। সেই শ্যালিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা বিমল বিশ্বাস। জামাইবাবুর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’ মহিলার। কিন্তু এই বয়সে আর বিয়ে করতে রাজি হননি সেই বিধবা। প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাই শ্যালিকাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগ প্রৌঢ় জামাইবাবুর বিরুদ্ধে। থানায় গিয়ে নিজের অপরাধ কবুল করেছেন অভিযুক্ত। এই ঘটনায় শোরগোল হাঁসখালি থানা এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে খবর, অভিযুক্তের বাড়ি কৃষ্ণনগর পুরসভায়। পেশায় রাজমিস্ত্রি তিনি। পরিবারে দুই সন্তান, তাঁদের স্ত্রী এবং নাতিনাতনি আছেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার বিধবা শ্যালিকার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। বাড়ি ছেড়ে মাঝেমধ্যেই হাঁসখালিতে শ্যালিকার বাড়ি গিয়ে থাকতেন। লোকে নানা কথা বলত। তবে সে সবে আমল দেননি বিমল। শ্যালিকাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, এ হেন বিমল শ্যালিকাকে নিজের সম্পত্তি দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হননি শ্যালিকা। মঙ্গলবার এ নিয়ে বিস্তর কথা কাটাকাটির পর শ্যালিকাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মেরে থানার পথে হাঁটা দেন বিমল। পুলিশের কাছে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন প্রৌঢ়। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘জামাইবাবুর সঙ্গে কোনও ভাবেই বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতে রাজি হননি শ্যালিকা। সেই রাগেই শ্যালিকাকে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারেন প্রৌঢ়। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জখম মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’
জানা যাচ্ছে, শ্যালিকাকে কুপিয়ে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানায় আত্মসমর্পণ করেন বিমল। সব কিছু শোনার পরে কোতোয়ালি থানার পুলিশ অভিযুক্তকে তুলে দেয় হাঁসখালি থানার হাতে। বিমলের সন্তানদের অভিযোগ, বাবা মাসিকে অনেক টাকা দিয়েছেন। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন তিনি। ধৃতের ছেলে তুফান বিশ্বাস, ‘‘আমার বাবার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মাসি আমাদের সর্বস্বান্ত করেছে। লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার পরে অন্য এক জনের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চেয়েছিল মাসি। বাবা মেনে নিতে না পেরে এ সব করেছে বলে মনে হয়।’’ যদিও টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন জখম মহিলা। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ওর দুই ছেলে আছে। অভিযুক্তেরও সন্তান আছে। তাই সম্পর্কে যেতে রাজি হয়নি ও। ও বলেছিল, ‘জামাইবাবুকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারব না।’ এ নিয়ে প্রায়ই ওদের অশান্তি হত। তবে এমনটা ঘটবে, কেউ কল্পনা করতে পারিনি।’’
আরও পড়ুন:
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত মহিলার হাতের একটি আঙুল মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে। ধারালো অস্ত্রের কোপে মাথায় মোট ১৭টি সেলাই পড়েছে। আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন তিনি। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার সঞ্জয় মিতকুমার মাকোয়ান বলেন, ‘‘ধৃতকে আদালতে হাজির করানো হচ্ছে। তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।’’