Advertisement
E-Paper

সলুয়া গ্রামের আকাশ জুড়ে অস্বস্তির ছায়া

সৌদিআরবে কাজে গিয়ে সলুয়ার মোকাম্মেল শেখের মৃত্যু যেন আতঙ্কের ছায়া ছড়িয়েছে গ্রামীণ মুর্শিদাবাদে। যার নেপথ্যে লুকিয়ে আছে করোনা ভাইরাসের ভূত! 

মফিদুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২০ ০৪:১৪
উৎকণ্ঠায় গ্রাম। নিজস্ব চিত্র

উৎকণ্ঠায় গ্রাম। নিজস্ব চিত্র

রুজির টানে ভিন দেশে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা, মুর্শিদাবাদে নতুন নয়। গাঁ-গঞ্জে পা বাড়ালে, পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রবাসে ভেসে পড়া এবং অপমৃত্যুর ঘটনা, আকছাড় কানে আসে এ জেলার আনাচ কানাচে। কিন্তু, সৌদিআরবে কাজে গিয়ে সলুয়ার মোকাম্মেল শেখের মৃত্যু যেন আতঙ্কের ছায়া ছড়িয়েছে গ্রামীণ মুর্শিদাবাদে। যার নেপথ্যে লুকিয়ে আছে করোনা ভাইরাসের ভূত!

মোকাম্মেলের ঠিক কী হয়েছিল, জানেন না তাঁর পরিবার। কিন্তু মধ্য প্রাচ্যের ওই দেশগুলিতে যেহেতু করোনার ছায়া পড়েছে তাই ভয় ছড়িয়েছে গ্রাম জুড়ে। মোকাম্মেলের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শরীরে ব্যথা, জ্বর নিয়ে তাঁকে স্থানীয় নজরান কিং খালিদ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২ মার্চ সেখানেই মারা যান তিনি। মৃতের বাবা নাসিরুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘অনেক ধারদেনা করে দু’টি আয়ের খোঁজে গিয়ে ছেলেটা আর ফিরল না। ওর যে কী হয়েছিল, জানতেই পারলাম না। এখন দেখছি ওর মৃত্যু ঘিরে গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক।’’

সলুয়া, গোবিন্দপুর, মসুররডাঙা— ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামগুলিতে এখন সেই আতঙ্কের গভীর রেশ। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল আওয়াল শেখ বলেন, ‘‘গ্রামে প্রায় হাজার পাঁচেক লোকের বাস। ছ'শোর বেশি লোক ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করে। সৌদিআরবে কাজ করে প্রায় ৬০-৬২ জন। পরিযায়ী সেই সব শ্রমিক পরিবারগুলিতেও একইরকম ভয়। গ্রামের রবিউল শেখ প্রায় তিন বছর ধরে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে সাফাইয়ের কাজ করেন। এ সপ্তাহেই তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বাতিল হয়েছে উড়ান। রবিউলের বাবা আসিরুদ্দিন বলছেন, ‘‘আমার ছেলেও তিন বছর সৌদিতে আছে। এ সপ্তাহে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য উড়ান বাতিল হয়েছে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি।’’

ধারদেনা কিভাবে মিটবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় মোকাম্মেলের পরিবার। মোকাম্মেলের মা ফুলজান বিবি এক চিলতে বাড়ির উঠোনে বসে বলেন, ‘‘অভাবের সংসার, বেশি পড়াশোনা করতে পারেনি ছেলে। তাই ছেলে যখন বাইরে কাজে যাবে বলল, আপত্তি করিনি। তা বলে এ ভাবে ছেলেটাকে হারাতে হবে!’’

নাসিরুদ্দিন আর ফুলজান, ছেলের মৃতদেহ ঘরে ফেরাতে জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের কাছে ছুটছেন সন্তানহারা নাসিরুদ্দিন। প্রতি দিন আত্মীয় পরিজন থেকে প্রতিবেশীরা এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন মোকাম্মেলের মা ফুলজানকে।

নাসিরুদ্দিনের প্রতিবেশী মোসাব্বর শেখ প্রায় তিন মাস আগে কুয়েতে কাজে গিয়েছেন। তাঁর উদ্বিগ্ন পরিবারও পথ চেয়ে বসে আছেন। মোসাব্বরের মা আসরা বিবি বলেন, ‘‘কী সব রোগ হচ্ছে শুনছি, হলে নাকি সারে না আমার ছেলেটা কবে যে দেসে ফিরবে, আতঙ্কে রাতে ঘুমোতে পারি না।’’

coronavirus Solua Murshidabad Soudi Arabia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy