কয়েক বছর আগেও ২১ জুলাইয়ের সভায় গিয়ে কলকাতার চিড়িয়াখানা, জাদুঘর, ইডেন গার্ডেন্স, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ভিড় করতেন ওঁরা।
তবে গত দু’–তিন বছর সেই প্রবণতায় একটু বদল এসেছে। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা একুশের সভার পরে অনেকে চলে যাচ্ছেন সৈকত শহর দিঘায়। গত বছরেও মুর্শিদাবাদ বিশেষ করে ডোমকলের তৃণমূলের নেতারা গিয়েছিলেন দিঘায়। এ বার তাঁদের দিঘা যাওয়ার উৎসাহ আরও বেড়েছে। কারণ, এ বার সমুদ্রের সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ দিঘার জগন্নাথ মন্দির। অন্য বারের চেয়ে এ বার দিঘা যাওয়ার প্রবণতা অনেকটা বেশি বলে জানা গিয়েছে তৃণমূল সূত্রেই। তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী রসিকতার সুরে বললেনও, ‘‘এ বার রথ দেখা আর কলা বেচা নয় (অর্থাৎ সভা এবং সমুদ্র নয়), এক ঢিলে তিন পাখি—সমাবেশ, সমুদ্র-সৈকত আর জগন্নাথ মন্দির।’’
আগেও দেখা গিয়েছে, ২১ জুলাই রাত থেকেই দিঘার হোটেলগুলিতে উপচে পড়েছে ভিড়। ২২ জুলাই সকাল থেকে সেখানে থিকথিকে ভিড় হয় পর্যটকদের। সমাজমাধ্যমে দিঘা ভ্রমণের ছবিও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। তবে গত বছর ২১ জুলাইয়ের পরে নেতৃত্বের নির্দেশেই সামাজিক মাধ্যমে ছবি প্রকাশ করেননি তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
ডোমকলের এক তৃণমূল নেতা এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের এখান থেকে দিঘা যাওয়া সহজ নয়। সকলের সেই সুযোগও হয় না। ফলে অনেকেই ঠিক করে রাখেন, কলকাতায় গেলে সেখান থেকে দিঘা হয়েই ফিরবেন। সামান্য বাড়তি খরচ করলেই দিঘা পৌঁছে যাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই। তবে বেশি আনন্দ-উচ্ছ্বাস না করাই ভাল। মনে রাখতে হবে আমরা যাচ্ছি দলের শহিদদের স্মরণে।’’ তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ডোমকল থেকে যত ছোট গাড়ি সভায় যাচ্ছে তার অর্ধেক সেখান থেকে দিঘা যাবে বলে জানিয়েছেন চালকেরা। সভার পরেই ওই সব গাড়ি দিঘা রওনা দেবে। এমনকি, দিঘায় হোটেল না পেয়ে অনেকে মন্দারমণি, তাজপুরেও হোটেল ‘বুক’ করেছেন।
ছোট গাড়ির চালক আব্দুর রাকিব মোল্লা বলেন, ‘‘মাসখানেক আগে এলাকার তৃণমূল নেতারা আমার গাড়ি ভাড়া করে রেখেছেন। বলেও রেখেছেন, ২১ জুলাইয়ের সভা শেষে যেতে হবে মন্দারমণি। ২২ এবং ২৩ তারিখ সেখানে থেকে পরদিন ফেরা।’’
তবে এ নিয়ে কটাক্ষ করতেছাড়েনি বিরোধীরা। ডোমকলের সিপিএমে নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীরা শহিদের স্মরণে সমাবেশে নাচতে নাচতে যায়। আর দিঘার হোটেলে গিয়ে একটু ফূর্তি করা এখন শহিদ দিবসের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে।’’ যদিও ডোমকলের তৃণমূল বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক দিলে লক্ষ লক্ষ তৃণমূল কর্মী জঙ্গলেও পৌঁছে যাবেন। বিরোধীদের এখন ‘নেই কাজ তো খই ভাজ অবস্থা’। মানুষের ঢল নামবে বুঝতে পেরে তাঁরা এ সবকথা বলছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)