কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে খোলাবাজারে সরু চালের দাম। কেজি প্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে মিনিকেট, বাঁশকাঠি বা জিরাকাঠির মতো বহুল বিক্রিত চালের দাম। ব্যবসায়ীদের মতে এখনই এই দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
হঠাৎ এ ভাবে চালের দাম বাড়ার কারণ?
চাষি, ধান ব্যবসায়ী, রাইস মিল মালিক এবং কুটিয়ালদের মতে নানা কারণেই দাম বাড়তে পারে। ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য কমিটির আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মল্লিক এর জন্য ধানের উৎপাদন কম হওয়ার পাশাপাশি আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় ধান চাষিদের ধান বিক্রি না করে মজুত রাখার প্রবণতাকে দায়ী করেছেন। প্রতিবেশী বাংলাদেশে এত অস্থিরতার পরেও চাল রফতানি শুরু হওয়ায় তাঁরা আশা করেছিলেন স্থানীয় বাজারে ধানের দাম আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, “প্রধানত চাষি ধান বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ায় ধানের ঘাটতি হচ্ছে। কাঁচামালের অভাবে মিলগুলিতে চালের উৎপাদন কমে গিয়েছে। ফলে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।”
নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, ‘‘ধানের উৎপাদন কমে যাওয়া ছাড়াও অন্য কিছু কারণ রয়েছে চালের দাম বাড়ার পিছনে। চালের রফতানি শুল্ক সম্প্রতি বেশ কিছুটা কমানো হয়েছে। আরব দেশগুলির সঙ্গে চাল রফতানি নিয়ে মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।” ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে বছরে আমন, বোরো মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। যার মধ্যে দেশে প্রয়োজন হয় এক কোটি ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন।
এ বছর দাম আরও বাড়বে অনুমান করে চাষিদের ধান বিক্রি না করে মজুত রাখার প্রবণতা প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ মল্লিক বলেন, ‘‘যারা ধান বিক্রি না করে মজুত রেখেছে তারা সবাই বড় চাষি। দীর্ঘ সময় ফসল ধরে রাখার ক্ষমতা তাদের আছে। তারা কেউ কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করেনি। কেননা খোলা বাজার এবং কিসান মান্ডিতে ধানের দাম প্রায় এক। ২৩০০ টাকার কাছাকাছি কুইন্ট্যাল। কিসান মান্ডিতে ধান বিক্রি করলে কুইন্ট্যাল পিছু সাত-আট কেজি ধান বাদ দেওয়া হয়। তাই চাষিরা খোলাবাজারে ধান বিক্রি করতে চাইছেন। ধানের অভাবি বিক্রি শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন বড় চাষিদের হাতেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ।”
জেলার রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক মহাদেব সাহা বলেন, “সরু চালের চাহিদা যতটা বেড়েছে এই মুহূর্তে ততটা জোগান দেওয়ার মতো ধান নেই। দাম বাড়ার সেটাঅ কারণ। মিনিকেট চাল পাইকারি দাম যেখানে ছিল প্রতি কেজি ৪০-৪৩ টাকা। তা বেড়ে হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা। বাঁশকাঠি চালের পাইকারি দাম ৫০-৫২ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এর জের পড়ছে খুচরো বাজারে।”
যারা ‘হাস্কিং’ পদ্ধতিতে চাল উৎপাদন করে নদিয়ার সেই কুটিয়ালরা জানাচ্ছেন, তাঁরা পর্যাপ্ত ধান হাতে পাচ্ছেন না চাল উৎপাদনের জন্য। চাকদহ থানা ধান্য চাউল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক মহাদেব সাহা বলেন, ‘‘করোনার পর থেকে দীর্ঘদিন চাল রফতানি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে ফের রফতানি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে রফতানি শুল্কও কমেছে। ফলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্যের অভাব ঘটেছে।পরিণামে এই মূল্যবৃদ্ধি।”
আগামী এপ্রিলের আগে চালের এই দাম কমার সম্ভাবনা নেই, এমনটাই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)