E-Paper

সাইরেনের আগেই বুক কাঁপছে এসএমএসে

চারদিক ঘুরে দেখার পর মন ভাল হয়ে গিয়েছিল। শহরটাই বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছিল।

দীপঙ্কর হালদার (কর্মসূত্রে ইজ়রায়েল নিবাসী)

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৫ ০৯:৩৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কাজের ফাঁকে মাঝেমধ্যেই দেখে নিতে হচ্ছে ফোনটা। কোনও বার্তা আসেনি তো? এসএমএস আসার শব্দ শুনলেই বুক কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে, এই বুঝি আবার সাইরেন বাজার বার্তা সেই বার্তা এল। ইজ়রায়েল সরকার সাইরেন বাজার মিনিট পাঁচেক আগেই সকলের মোবাইলে এসএমএস করে বার্তা দিয়ে দিচ্ছে, যাতে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া যায়।

আমরা রয়েছি ইজ়রায়েলের অন্যতম জনবহুল ও ব্যস্ত শহর নেতানিয়ায়। ভূমধ্যসাগরের তীরে এই শহর খুবই সুন্দর, প্রায় ছবির মতো। বছর খানেক আগে যখন এখানে নির্মাণকর্মীর কাজে এসেছিলাম, তখন শহরটা দেখে আনন্দ পেয়েছিলাম।

চারদিক ঘুরে দেখার পর মন ভাল হয়ে গিয়েছিল। শহরটাই বাড়ি ছেড়ে আসার কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছিল। তখন কি এক বারও ভাবতে পেরেছিলাম যে সামনে এমন কঠিন দিন অপেক্ষা করে আছে? যতই শত্রুতা থাক, ভাবতেই পারিনি যে ইরানের সঙ্গে ইজ়রায়েলের যুদ্ধ লেগে যাবে। ইরান থেকে ঝাঁকে-ঝাঁকে মিসাইল ধেয়ে আসবে এই দেশটার দিকে। কিন্তু এখন সেটাই হচ্ছে।

যদিও এই শহরে এখনও জনজীবন প্রায় স্বাভাবিকই আছে। তবে সকলের মনের ভিতরে ভয় কাজ করছে। কারণ আমাদের দক্ষিণে রাজধানী তেল আভিভ আর উত্তরে হাইফা বন্দরশহরে মিসাইল আছড়ে পড়েছে। বেশ ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বলে শুনছি। যুদ্ধ চলতে থাকলে আমাদের শহরেও যখন-তখন মিসাইল এসে পড়তেে পারে, এই আশঙ্কা কেউই উড়িয়ে দিতে পারছে না।

আমরা এখন একটা বিশতলা বাড়ি তৈরির কাজ করছি। এই যুদ্ধের আবহেও কাজকর্ম কিন্তু প্রায় স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। আমরা রোজই কাজে যাচ্ছি। তবে সারা দিনে মাঝে-মধ্যেই সাইরেন বেজে উঠছে।

আমরা তার আগেই মোবাইলে বার্তা পেয়ে সোজা ‘বম্ব শেল্টার রুম’-এ ঢুকে পড়ছি। প্রতিটি তলাতেই একটা করে এ রকম ঘর আছে, স্টিল আর উচ্চমানের কংক্রিট দিয়ে তৈরি। কিন্তু যদি কোনও অতি-শক্তিশালী বিস্ফোরণ হয়, এই আশ্রয় কি আমাদের রক্ষা করতে পারবে?

আমরা এখানে ন’জন ভারতীয় আছি। তার মধ্যে দু’জন বাঙালি। আমার বাড়ি নদিয়ার একেবারে সীমান্ত গ্রাম ভীমপুরের মহখোলা-রাঙিয়ারপোতায়।

বাড়ি ফেরার বিষয়ে এখনই কিছু ভাবছি না। কাজের প্রচণ্ড চাপ। আশা করি, পরিস্থিতি শুধরে যাবে। আর অন্যথায় দেশে তো ফিরে যেতেই হবে। আমাদের দেশের সরকার নিশ্চয়ই সেই ব্যবস্থা করবে।

অনুলিখন: সুুুুস্মিত হালদার

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nadia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy