Advertisement
E-Paper

ক্ষতিগ্রস্তের বদলে টাকা প্রধানের স্ত্রী-র অ্যাকাউন্টে

ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে জেলায় কিছু মানুষ দুর্নীতি করতে পারেন, এমন আশঙ্কার কথা কয়েক আগেই নিজের ফেসবুকে ভিডিও পোস্টে বলেছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০২:৪৫
আমপানের সরকারি সাহায্যের টাকা নিয়ে দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ। শান্তিপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

আমপানের সরকারি সাহায্যের টাকা নিয়ে দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ। শান্তিপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ

ঘূর্ণিঝড় আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকা এল। কিন্তু অভিযোগ, তার অনেকটাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে চলে গেল স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের স্ত্রী ও বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যের অ্যাকাউন্টে। তা নিয়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভে তোলপাড় শান্তিপুরের বেলগড়িয়া ২ পঞ্চায়েত।

ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে জেলায় কিছু মানুষ দুর্নীতি করতে পারেন, এমন আশঙ্কার কথা কয়েক আগেই নিজের ফেসবুকে ভিডিও পোস্টে বলেছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সতর্ক করেছিলেন সবাইকে। তার পরেই তাঁর দল তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত প্রধান এবং সেখানকার এক বিজেপি সদস্যের বিরুদ্ধে ত্রাণে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা এই খবর জানার পরেই মঙ্গলবার পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখান। দুর্নীতির উপযুক্ত তদন্ত দাবি করেছেন তাঁরা।

শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যদি কোনও দুর্নীতি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ করবে এ ব্যাপারে সবাই আশ্বস্ত থাকতে পারেন।’’ আর রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের কথায়, ‘‘তৃণমূলের লোক জন এ সব করে নিজেরাই লুটেপুটে খাচ্ছে। এর মধ্যে আমাদের কাদের নাম, কেন আছে, তাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কিনা, তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ রানাঘাটের মহকুমাশাসক হরসিমরন সিং বলেন, ‘‘সঠিক মানুষ যাতে ক্ষতিপূরণ পান তা দেখা হবে। বিডিওকে বলেছি বিষয়টি দেখতে।’’সরকার জানিয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হবে। বিভিন্ন পঞ্চায়েত এবং পুরসভা ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দেয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের এলাকার যে ২০ জনের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে তাঁদের মধ্যে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়াও রয়েছেন খোদ পঞ্চায়েত প্রধান দীপক মণ্ডলের স্ত্রী পদ্মা মণ্ডল, উপ-প্রধান বিপ্লব প্রামাণিকের কয়েক জন ঘনিষ্ঠ। এ ছাড়াও রয়েছেন পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্যের পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, এঁদের তেমন কোনও ক্ষতিই ঝড়ে হয়নি। তাও এঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে।

ক্ষতিপূরণের টাকা স্ত্রীয়ের অ্যাকাউন্টে এবং আরও কয়েক জন ঘনিষ্ঠের অ্যাকাউন্টে ঢোকার কথা মেনেছেন পঞ্চায়েত প্রধান দীপক মণ্ডল। যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘আমাদের ব্লকে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা অনেক বেশি। সে জন্য আমরা স্থির করি, পরিচিত কয়েক জনের অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা রেখে পরে তা আরও বেশি সংখ্যক ক্ষতিগ্রস্তের মধ্যে ভাগ করে দেব।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত তিনি নিজের থেকে কী করে নিতে পারেন? কী করেই বা সরকারের অনুমতি না নিয়ে বা প্রশাসনকে না জানিয়ে নিজের মতো করে কিছু লোকের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা আনেন? তার উত্তর মেলেনি।

জেলার একাধিক পঞ্চায়েতের প্রধানেরা আবার জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত-পিছু ১৩০ জনকে ঘর তৈরির টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এখানেই উঠছে আপত্তি। তাঁদের দাবি, সব পঞ্চায়েতে সমান ভাবে ক্ষতি হয়নি। পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতগুলিতে কাঁচা বাড়ির সংখ্যা বেশি ছিল। সেখানে ১৩০ জনের বেশি লোকের ঘর ভেঙেছে। অনেক পঞ্চায়েতের আয়তন ছোট। অন্যদিকে ঘেঁটুগাছি, দেউলি, তাতলা-১ এর মতো পঞ্চায়েতের আয়তন বড়। উপভোক্তার সংখ্যা বড় পঞ্চায়েতগুলিতে বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তাতলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পার্থসারথী দে জানাচ্ছেন, ঘর তৈরির টাকা সব পঞ্চায়েতের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করার নীতির ফলে অনেক জায়গাতেই সমস্যা হচ্ছে।

তথ্য সহায়তা: মনিরুল শেখ

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy