Advertisement
E-Paper

ভোটটাই দিতে দিল না, আক্ষেপ বৃদ্ধার

সেই কবে থেকে ভোট দিচ্ছেন তিনি। ভোটের আগে পাড়ার ছেলেদের কত তোয়াজ—‘ঠাকুমা ভোটটা আমাদের দিও।’ একগাল হেসে মাথা নাড়তেন। ভোটের দিন সকাল সকাল বুথে পৌঁছে যেতেন।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:১৯
নিজের বাড়িতে প্রভাবতী। — নিজস্ব চিত্র

নিজের বাড়িতে প্রভাবতী। — নিজস্ব চিত্র

‘‘ও বউ ভোট দিলি?’’

—‘‘হ। তুমি দাওনি?’’

—‘‘নারে বউ, ওরা নাম কেটে দিয়েছে।’’ কারা কেটে দিয়েছে, উত্তর মেলে না। শুধু বুক ঠেলে দীর্ঘশ্বাস বেরোয়। উত্তর না পেয়ে বউ চলে যায়। রাস্তার পাশে চুপটি করে বসে থাকেন প্রশ্নকর্ত্রী। পরিচিত মুখ দেখে ফের একই কথা শুধোন। কেউ উত্তর দেয়। কেউ দেয় না। প্রশ্নকর্ত্রী মনে মনে বিড়বিড় করে।

সেই কবে থেকে ভোট দিচ্ছেন তিনি। ভোটের আগে পাড়ার ছেলেদের কত তোয়াজ—‘ঠাকুমা ভোটটা আমাদের দিও।’ একগাল হেসে মাথা নাড়তেন। ভোটের দিন সকাল সকাল বুথে পৌঁছে যেতেন। ভোটকর্মীরা যত্নে হাতে কালি লাগিয়ে দিত। তারপর ‘ভোটঘরে’ গিয়ে মেশিনে হাত ছোঁয়ালে একটানা বাঁশির মতো আওয়াজ—‘পিঁ..ই...প’। ওই দিনটা, ওই মুহূর্তটা বড় আনন্দ দিত তাঁকে।

কিন্তু এ বছর সেই সুযোগটুকু পেলেন না মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙার প্রভাবতী পাল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভোট দিয়ে আসছেন তিনি। কোনও বার বাদ পড়েনি। কিন্তু এ বার অজ্ঞাত কারণে ভোট তালিকা থেকে নাম কাটা গিয়েছে বছর পঁচানব্বইয়ের প্রভাবতীদেবীর। তালিকা থেকে যে নাম বাদ পড়েছে কিছুদিন আগে জানতে পারেন প্রভাবতীদেবী। বাড়ির লোকেও জানেন না কেন নাম বাদ দেল। এ ক’বছরে ঠাঁই বদল হয়নি। সুতরাং ঠিকানা বদলের কারণে যে নাম কাটা গিয়েছে সে সম্ভবনাও নেই।

প্রভাবতীদেবীর বড় ছেলে বৃন্দাবন পাল বলেন, “সবাইকে ভোট দিতে যেতে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছেন মা। অনেক করে বলেছিল ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু আমরা কী করব। কেন যে নাম বাদ গেল বুঝতে পারছি না।’’ নাতি পার্থ বলেন, “পচানব্বই বছর বয়স হলেও ঠাকুরমা আজ অবধি কোনও বিধবা ভাতা বা বার্ধক্য ভাতা পাননি। এ বার ভোট তালিকা থেকেও নাম বাদ গেল। এ ভাবে কাউকে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত হয়নি।’’

এ দিন বাড়িতে পা দিয়ে দেখা গেল উঠোনে তরকারি কাটতে বসেছেন প্রভাবতীদেবী। পরিচয় পেয়ে প্রভাবতীদেবী বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে এসে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। তখন ভোটার কার্ড ছিল না। ভোট দিতে যাব বলে সকাল সকাল রান্না সেরে নিতাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘জা-ননদদের সাথে গিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। এ বার তো ভোটটাই দিতে দিল না।”

কেন নাম বাদ গেল?

দায়সারা জবাব আসে মুরুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের টুসি পালের থেকে। তিনি বলেন, “বয়স হয়েছে। যে কোনও কারণেই হোক নামটা তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। পরিবারের লোকদের উচিত ছিল বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো। আগামী দিনে তিনি যাতে ভোট দিতে পারেন সেই চেষ্টা করা হবে।”

করিমপুর ২ ব্লকের বিডিও অনুপ মণ্ডল বলেন, ‘‘কারও নাম বাদ যাওয়ার বিষয়টি জানা নেই। স্থানীয় বুথ লেভেল অফিসারের থেকে জেনে পদক্ষেপ করা হবে।’’ একই কথা শোনান তেহট্ট মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

old woman election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy