Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

র‌্যাগিং-মার, ধৃত চার ছাত্র

দাদারা তাকে হাতা খুলিয়ে বোতাম লাগাতে বাধ্য করে। প্রতিবাদ করতে গেলে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে জখম সৌভিক। —নিজস্ব চিত্র।

শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে জখম সৌভিক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০২:০০
Share: Save:

জামার হাতা গোটানো কেন? লন থেকে ধেয়ে এসেছিল প্রশ্নটা। কলেজে ছেলেটি নতুন। সমীহ যে করতেই হবে, জানত না। তাই প্রশ্ন শুনেও সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি।

এটাই প্রথম ‘অপরাধ’ কৃষ্ণনগরের বিপ্রদাস পাল চৌধুরী ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে ভর্তি হওয়া সৌভিক কুণ্ডুর। দাদারা তাকে হাতা খুলিয়ে বোতাম লাগাতে বাধ্য করে। প্রতিবাদ করতে গেলে রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

তাতেও দমেনি ছেলেটি। বরং সটান কলেজের অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানায়। এটা তার দ্বিতীয় ‘অপরাধ’। সে কারণে ছুটির পরে বাড়ি ফেরার সময়ে কলেজের সামনে তাকে ধরে ফের বেধড়ক মারা হয়। খবর পেয়ে শিক্ষকেরা এসে তাঁকে উদ্ধার করে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করান। নাকে ও মুখে ভাল মতো চোট রয়েছে। ঘটনার পরেই ওই সরকারি পলিটেকনিক কলেজের অধ্যক্ষ নারায়ণ সাহা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। র‌্যাগিং ও মারধরের অভিযোগে রাতে পুলিশ তৃতীয় বর্ষের চার ছাত্রকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম অর্পণ বিশ্বাস, প্রদীপ বিশ্বাস, অঙ্গদ সরকার ও নিলয় সিকদার। তাদের জেরা করে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে, মারধরে আর কারা জড়িত ছিল। হাসপাতালে শুয়ে সৌভিক অভিযোগ করেন, “কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ওই দাদারা আমায় নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছিল। সামান্য কারণে হেনস্থা করছিল। আজ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় অধ্যক্ষকে জানাতে বাধ্য হই।”

সৌভিক জানান, কলেজের বাইরে তৃতীয় বর্ষের ছেলেরা তাঁর অপেক্ষায় ছিল। তিনি বেরোতেই তারা চড়াও হয়। প্রত্যক্ষদর্শী লক্ষ্মণ শর্মা বলেন, “কয়েক জন মিলে ছেলেটাকে রাস্তায় ফেলে চড়-ঘুষি-লাথি মারছিল। কী ভাবে যে ছাত্রেরাই আর এক ছাত্রকে এ ভাবে মারতে পারে, বুঝি না।”

ঘটনাটি শুনেই জেলাশাসককে ফোন করে জানান অধ্যক্ষ। তার পর পুলিশের কাছে অর্পণ বিশ্বাসের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে জেলা হাসপাতালে সৌভিককে দেখতে যান। অধ্যক্ষ বলেন, “সকালে অভিযোগ পেয়েই ‘অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি’র বৈঠক ডেকেছিলাম। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেল। আমরা কোনও ভাবেই এই ধরনের ঘটনাকে ছোট করে দেখতে রাজি নই। কঠোর পদক্ষেপ করুক পুলিশ।”

সৌভিকের বাড়ি নবদ্বীপে। এবছর সে বিপ্রদাস পালচৌধুরী দিন চারেক আগেই সে কলেজে এসেছে। প্রায় প্রতি বছরই প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়াদের একাংশ নির্যাতন করে বলে অভিযোগ। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “মারাত্মক ঘটনা। আমরা ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করব, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bipradas Pal Chowdhury Institute of Technology Ragging
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE