Advertisement
E-Paper

বঁটিতে নিয়ম কেটে পাতে ছোট্ট ইলিশ

পূবালি হাওয়া আছে, বর্ষা-মেঘের ছায়াও পড়ছে জলে। তা হলে? গঙ্গা-ভাগীরথীর জল যে বড় নোনতা। পরিযায়ী ইলিশ তাই আর এ পথ মাড়াচ্ছে না। পুরনো পাড়া-ছাড়া রুপোলি শস্য তাই বছর কয়েক ধরেই পাড়ি দিচ্ছিল মায়ানমার উপকূলের নদী-নালায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৬:০২
নতুন ইলিশ। বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

নতুন ইলিশ। বহরমপুরে। —নিজস্ব চিত্র।

পূবালি হাওয়া আছে, বর্ষা-মেঘের ছায়াও পড়ছে জলে। তা হলে?

গঙ্গা-ভাগীরথীর জল যে বড় নোনতা। পরিযায়ী ইলিশ তাই আর এ পথ মাড়াচ্ছে না। পুরনো পাড়া-ছাড়া রুপোলি শস্য তাই বছর কয়েক ধরেই পাড়ি দিচ্ছিল মায়ানমার উপকূলের নদী-নালায়।

সেই হারানো ইলিশ আবার ছেড়ে যাওয়া নদীতে ফিরছে। কলকাতায়র লাগোয়া এলাকা কিংবা গঙ্গা মোহনায় তার ইশারা মিলেছে। অনেক উপরে, ফরাক্কার গাঙেও ইতিউতি দেখা মিলছে ইলিশের।

আর পায় কে! নাইলনের (যা কেন্দ্রীয় মৎস্য মন্ত্রক নিষিদ্ধ করেছে) মিহি জালে ছোট্ট, আড়াই-তিনশো গ্রাম ওজনের ইলিশ ধরতে রে রে করে নেমে পড়েছে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।

‘ইলিশ সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র’ থেকে প্রচারটা হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই— ছোট ইলিশ ধরবেন না। মাছগুলো বড় হতে দিন। দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সে কথা শুনলে তো! মৎস্যজীবীদের কারও বোধহয় হাঁসের সোনার ডিম দেওয়ার সেই গল্পটা জানা নেই।’’

আর তা, লোভ সম্বরন করতে না পেরে গাঙে দেখা মিলতেই, ছোট ইলিশ ধরাই শুরু করেছেন তাঁরা।

ফরাক্কা ব্যারাজ এবং লালবাগ থেকে ফরাক্কা— ওই এলাকায় জুন থেকে থেকে মধ্য অগস্ট এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ওই এলাকায় দেদার ইলিশ ধরছেন মৎস্যজীবীরা, স্থানীয় বাজারগুলিতে পা দিলেই যা নজর এড়াচ্ছে না।

সরকারি ভাবে রাজ্যে পাঁচটি অঞ্চলকে ইলিশের আশ্রয়স্থল হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মুর্শিদাবাদের ওই দুটি এলাকা রয়েছে।

সরকারি প্রচারপত্র বলছে, ৯ ইঞ্চির কম দৈর্ঘের ইলিশ ধরা যাবে না। কিন্তু ৬-৭ ইঞ্চি দৈর্ঘের ইলিশও এখন বাজারে বিকোচ্ছে। কোথা থেকে পেলেন? বাজারের মাছওয়ালা দু’ চোখ এঁঠো করে হেসে বলছেন, ‘‘গঙ্গায় জাল পেললেই মিলছে বাবু!’’

আসছে জলঙ্গি ও লালোগোলার পদ্মা থেকেও। জানা গিয়েছে, বহরমপুরের ফরাসডাঙা, লালবাগ, ফরাক্কা ও বেলডাঙার গঙ্গা থেকেও ধরা পড়ছে ইলিশ।

মুর্শিদাবাদ জেলা মৎস্য দফতরের সহ-অধিকর্তা জয়ন্ত প্রধান বলেন, ‘‘ছোট ইলিশ ধরা চলছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। খবর পেয়েছি। তা নিয়ে অভিযানও চালানো হচ্ছে।’’ মানুষ সচেতন না হলে রুখবে কে?

বহরমপুরের ‘নতুন বাজার মৎস্য আড়তদার উন্নয়ন সমিতি’র সম্পাদক অনিল মণ্ডল অবশ্য ছোট ইলিশ ধরার দায় চাপিয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের ঘাড়ে। তিনি বলেন, ‘‘ডায়মন্ডহারবার থেকেই ওই ইলিশ আসছে।’’ ‘নতুন বাজার মৎস্য আড়তদার উন্নয়ন সমিতি’র সভাপতি অরুণকুমার ঘোষ কিন্তু মেনে নিচ্ছেন, এ জেলাতেও ছোট ইলিশ ধরা চলছে। তিনি বলেন, ‘‘মৎস্য দফতরের নজরদারি এড়িয়ে এ জেলার গঙ্গা-পদ্মায় লুকিয়ে চুরিয়ে ছোট ইলিশ কেউ কেউ ধরেন। তবে আগের থেকে সচেতনতা বেড়েছে।’’

পদ্মার তীরবর্তী এলাকার গ্রাম গুলিতে রোজার মাসে ইলিশের চাহিদা চরমে ওঠে। পদ্মা থেকে বাজারে পৌঁছনোর আগেই বিকালে নদীপাড়ে পৌঁছে যায় আড়তদারের লোক। লালগোলার খান্দুয়া, তারানগর, বয়রা, ময়া ও রঘুনাথগঞ্জের বড়জুমলা এলাকার পদ্মাপাড়ে রোজার মাসে বিকাল হলেই জ্যান্ত ইলিশ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। ফলে চাহিদা ও দামের উর্ধ্বগতির কথা ভেবে এই মাসে ইলিশ ধরার সরকারি নিয়ম কানুনের কেউ তোয়াক্কা করেন না।

একই অবস্থা ফরক্কা ফিডার ক্যানাল ব্যারাজ লাগোয়া পদ্মায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘ইলিশ পেলে কে ছাড়ে বলুন, এই সময় বিকালে ফরাক্কা ফিল্ড হস্টেলের সামনে বিকোচ্ছে ১০০ থেকে ২৫০ গ্রামের ছোট ইলিশ।’’ এ ছাডাও নিউ ফরাক্কা মাছের আড়ত, ফরাক্কা ব্যারাজ মাছের বাজার, এনটিপিসি মোড়েও দেখা মিলছে তাদের।

রুখবে কে? ছোট্ট ঝুড়িতে, বরফের আড়ালে ছোট্ট ইলিশগুলো যেন সে প্রশ্নই করছে।

Hilsa Fish Fisherman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy