শমসেরগঞ্জের জাফরাবাদে বাবা-ছেলেকে খুনের ঘটনায় ধৃতদের জেলবন্দি রেখেই বিচারপর্ব শেষ (কাস্টডি ট্রায়াল) করতে চাইছে পুলিশ। এর জন্য ইতিমধ্যে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলিও নিয়োগ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়ে দ্রুত বিচারপর্ব শুরুর জন্য আদালতে আবেদন করা হতে পারে।
এই ঘটনার এক তদন্তকারী জানান, অভিযুক্তদের প্রায় সবাই গ্রেফতার হয়েছেন। কেউই এখনও জামিন পাননি। তাই জেলবন্দি রেখে বিচার শুরুর চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, ওই ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি খতিয়ে দেখে পুলিশ ইতিমধ্যে বারো জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তবে নিহতদের পরিবার অভিযোগে যে ছ’জনের নাম দিয়েছিল তার মধ্যে এই খুনের মূল অভিযুক্ত-সহ দু’জন এখনও পুলিশের ‘নাগালের’ বাইরে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছে। অভিযোগ, সেই মামলা ঠেকাতে পুলিশ ‘ভুয়ো’ অপহরণের কথা বলে মামলাকারী দুই মহিলাকে কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। হাই কোর্টে সেই অভিযোগও জমা পড়়েছে।
গত ১১ এপ্রিল ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, শমসেরগঞ্জের মতো বিভিন্ন এলাকা। বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে উচ্চপদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে গেলেও অবস্থা সামলাতে পারেননি। ১২ এপ্রিল লুঠপাট, ভাঙচুর এবং আগুন লাগানো হয় শমসেরগঞ্জের বেতবোনা, জাফরাবাদের মতো ছ’টি গ্রামে। সেখানেই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন বাবা এবং ছেলে। অভিযোগ ওঠে, হামলার খবর পেয়েও পুলিশনিষ্ক্রিয় ছিল।
নবান্ন সূত্রের খবর, ওই ঘটনা সামনে আসার পরেই শমসেরগঞ্জের ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ব্যবস্থা নেওয়া হয় আরেক অফিসারের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে নবান্নের নির্দেশে ওই তদন্তের জন্য বিশেষ দল (সিট) গঠন করে তদন্ত শুরু করা হয়। রাজ্য পুলিশের এক অফিসার জানান, উচ্চপদস্থ কর্তারা চাইছেন ওই মামলায় অভিযুক্তদের জেলে রেখেই বিচার পর্ব শেষ করতে। তার জন্য যা যা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সবইনেওয়া হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মূলত সিসিটিভি ক্যামেরা দেখেই শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষা ‘গেট প্যাটার্ন অ্যানালিসিস’ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রত্যেক ব্যক্তির হাঁটাচলা, দৌড় কিংবা তাঁর আদবকায়দার ভঙ্গি বা প্যাটার্ন আলাদা। ওই ঘটনার তদন্তে সিসিটিভিতে ধরা পড়া অভিযুক্তদের হাঁটা চলা সব কিছুর তার ফুটেজ ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তার সঙ্গে জেলে গিয়ে অভিযুক্তদের হাঁটাচলার ভিডিয়ো করেন বিশেষজ্ঞেরা। এরপর ওই ফুটেজ ও ভিডিয়ো ফরেনসিক বিশেষজ্ঞেরা পরীক্ষার মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন, সে দু’টি একই ব্যক্তির কি না?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)