প্রাতর্ভ্রমণে বের হওয়া প্রবীণ নাগরিকেরাই হয়ে উঠেছিল তাদের 'শিকার'। চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে মুহূর্তের মধ্যে গলা থেকে সোনার হার ছিনিয়ে চম্পট দিচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। পর পর এমন বেশ কয়েকটি ঘটনায় কল্যাণী শহরে আতঙ্কে অনেকেই প্রাতর্ভ্রমণে বেরোনোই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদিও বা কেউ বের হতেন, তিনি গলা থেকে সোনার হার খুলে বাড়িতে রেখে আসতেন। তবে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কিছুটা স্বস্তি দিয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়েছে দুই দুষ্কৃতী। আহিদ মণ্ডল ও সুখেন মণ্ডল নামে ওই দু’জন উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা ও জেঠিয়া এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মে মাসে কল্যাণী থানায় তিনজন প্রবীণ বাসিন্দা পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই অভিযোগে লিখেছিলেন,‘প্রাতর্ভ্রমণের সময় একটি কালো মোটরবাইকে থাকা দুই আরোহী গলা থেকে সোনার হার ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে’।" তদন্ত নেমে শহরের বিভিন্ন নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। তাতে দেখা যায় কালো রঙের ওই মোটর বাইকের কোনও নম্বর প্লেটই নেই। এছাড়া বাইকে থাকা দু'জনের মাথায় হেলমেট থাকায় তাদের শনাক্ত করাও সম্ভব হচ্ছিল না। তবে তারপর থেকেই শহরের প্রবেশ পথগুলিতে ভোরের দিকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়। গত ১৫ জুন ভোরে বাইকটি পুলিশের নজরে আসে। কিন্তু পুলিশ সেটির পিছু নিতেই দুই দুষ্কৃতী পালানোর চেষ্টা করে। সেই সময় কল্যাণী জেআইএস মোড়ের কাছে এক পুলিশ কর্মী নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়ি ভাবে দাঁড় করিয়ে দেন। ধরা পড়ে যায় দুই দুষ্কৃতীই। পরে আমডাঙা থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া তিনটি হার।
কেন প্রাতর্ভ্রমণে বের হওয়া প্রবীণদের নিশানা করত দুষ্কৃতীরা?
পুলিশ জানিয়েছে, ভোরের দিকে শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। তাছাড়া প্রবীণদের পক্ষে দুষ্কৃতীদের পিছু নেওয়া সম্ভব নয়। আর প্রাতর্ভ্রমণে বের হওয়া বাসিন্দাদের সঙ্গে যানবাহন না থাকাটাই স্বাভাবিক। যে কারণে তাঁদের নিশানা করেছিল ওই দুই দুষ্কৃতী। ধৃত আহিদ দীর্ঘদিন ধরে মোটরবাইক নিয়ে স্টান্টবাজি করে। তাদের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন থানায় একাধিক অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) সিদ্ধার্থ ধাপলা বলেন, ‘‘কল্যাণী থানা ও জেলা পুলিশের অপরাধ দমন শাখার যৌথ অভিযানে ওই দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আর কে বা কারা যুক্ত, সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)