কৃষ্ণনগরে গুলিতে নিহত তরুণী ঈশিতা মল্লিকের মা আর ভাইকেও সম্ভবত খুন করতে চেয়েছিল অভিযুক্ত দেশরাজ সিংহ। সে কারণেই ঈশিতার মৃত্যুর পরে পালিয়ে না গিয়ে সে তাঁদের ঘরে অপেক্ষা করছিল। তদন্ত যত এগোচ্ছে, এমন ধারণাই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে পুলিশের। গুলির খোলের হিসাব তার একটাবড় কারণ।
গত ২৫ অগস্ট কৃষ্ণনগরে বাড়িতে ঢুকে বছর উনিশের ঈশিতার মাথায় খুব কাছ থেকে পর পর তিনটি গুলি করা হয়। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে তাঁর মা কুসুম মল্লিক জানিয়েছেন, খুনের খানিক পরে তিনি ছেলেকে নিয়ে স্কুল থেকে ফিরলে তাঁকেও গুলি করতে চেষ্টা করে দেশরাজ, কিন্তু গুলি বেরোয়নি। তিনি ছেলেকে নিয়ে ছুটে একটি ঘরে ঢুকে চিৎকার করতে শুরু করলেসে পালায়।
প্রথম দিকে বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। কারণ, পিস্তলের ঘোড়া (ট্রিগার) টানলে গুলি যদি না ছোটে, ম্যাগাজ়িন থেকে কার্তুজ বাইরে পড়ার কথা। তার পিছনে টোল পড়ারও কথা। এমন কোনও কার্তুজ ঘটনাস্থলে মেলেনি। যেখানে অভিযুক্তকে আড়াল করতে অন্তত চারটি মোবাইল সিমকার্ড এবং একটি দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে সম্ভাব্য অপরাধী কেন বাড়ির লোকের ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকবে, তার কারণ বোঝা যায়নি। কিন্তু গুলির খোলের হিসাব পুলিশকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।
কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঈশিতার মাথায় যেহেতু তিনটি গুলি করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে তিনটি খালি খোল পাওয়ার কথা। কিন্তু মিলেছে দু’টি। এমন হতে পারে, যে তৃতীয় গুলি ছোড়ার সময়ে কার্তুজের খোল বাইরে না পড়ে পিস্তলের ভিতরে রয়ে গিয়েছে। তাই পরে ট্রিগারে চাপ দিলেও, গুলি বেরোয়নি। আগের খোলটি আটকে থাকায় সে কার্তুজটিও বাইরে পড়তে পারেনি। শুক্রবার কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, প্রায় সাত মাস ধরে ঈশিতা দেশরাজের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলছিলেন। মাস তিনেক আগে, সমস্ত সমাজমাধ্যমে তিনি দেশরাজকে ‘ব্লক’ করে দেন। এর পরে, অগস্টের গোড়ায় দেশরাজ এক বার উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরে দেশের বাড়িতে গিয়েছিল। কাঁচরাপাড়ার ধরমপুরের ভাড়াবাড়িতে ফিরে কোমরে গোঁজা পিস্তলের ছবি ইনস্টাগ্রামে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের গ্রুপে দিয়ে তা ঈশিতাকে পাঠাতে বলে। তবে সে পিস্তল যদি সে নিজে উত্তরপ্রদেশ থেকে নিয়ে এসে থাকে, তা হলে তার খুড়তুতো ভাই নিতিনপ্রতাপ সিংহ অন্যের নামে তোলা মোবাইলের সিমকার্ড নিয়ে কয়েক দিন আগে দেওরিয়া থেকে এসেছিল কেন, তা নিয়ে ধাঁধায় পুলিশ। কারণ, সশস্ত্র দেশরাজের ছবি হাতে আসার আগে পুলিশের সন্দেহ ছিল, নিতিনই দেশরাজকে পিস্তল এনে দিয়েছে এবং তার নামে কাটা ট্রেনের টিকিটে ফিরে গিয়েছে। কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের ১৫ জন কর্মী চারটি দলে ভাগ হয়ে দেশরাজ ও নিতিনের খোঁজে উত্তরপ্রদেশেতল্লাশি চালাচ্ছেন।
এ দিনই ছিল ঈশিতার পারলৌকিক কাজ। তাঁর বাবা দুলাল মল্লিক বলেন, “যে হাতে মেয়ের সম্প্রদান করার কথা ছিল, সে হাতে আজ পিণ্ড দিতে হল!”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)