ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
কয়েক মুহূর্তে উধাও সেই চাঁদিফাটা রোদ্দুর। হঠাৎই দমকা হাওয়া। ধুলোর ঝড়। দুপুর দু’টোতেই আঁধার নেমে এল। ভেসে এল শাঁখের আওয়াজ। কোনও মতে একটা নিরাপদ ছাউনি খুঁজে নিয়ে তার নীচে আশ্রয় নিলেন পথচলতি মানুষ। কেউ বা জোরকদমে পা চালালেন বাড়ির উদ্দেশে। যাঁরা বাড়িতেই ছিলেন, গা এলালেন বারান্দার আরাম কেদারায়। সকালের প্যাঁচপ্যাঁচে গরমের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি।
স্বস্তিই বটে। তবে সেটা বাড়ির চৌহদ্দিতেই। বাড়ির বাইরে পা বাড়ালেই বিপত্তি। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে প্রাণটা জুড়ালো কি না, রাস্তায় জল থইথই দশা। এক পা-ও চলা দায়। চুনুরিপাড়া, কাঠালপোতা, মঙ্গলাপাড়া... কৃষ্ণনগরের প্রায় সর্বত্রই এক ‘জল-ছবি’।
বর্ষা তো এল বলে। পরপর দু’দিনের বৃষ্টিতেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে এর পর কী হবে! চিন্তায় এখনই মাথায় হাত বাসিন্দাদের। তাদের অভিযোগ, প্লাস্টিক-সহ নানা আবর্জনায় নিকাশিনালা বন্ধ। জল যাওয়ার জায়গা নেই। আর তার জেরেই কৃষ্ণনগর মুহূর্তে ভেনিস।
যদিও কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারম্যান অসীমকুমার সাহার সাফাই, “বৃষ্টির জেরে এ দিন শহরের কিছু এলাকায় জল জমেছিল বটে, তবে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যেই রাস্তা থেকে জল নেমে গিয়েছে।”
অসীমবাবুর দাবি, নিকাশিনালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তাঁর বক্তব্য, রাস্তায় জল জমার জন্য দায়ি মানুষই। কারণ বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও অবাধে প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। ব্যবহারের পর যত্রতত্র তা ফেলাও হয়। ফলে নিকাশিনালার মুখ আটকে এই বিপত্তি। সামান্য বৃষ্টিতেই নালা উপচে জল উঠে আসছে রাস্তায়। ‘‘জল জমার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে শহরবাসীকে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নিজেরা সতর্ক না হলে সমস্যার সমাধান অসম্ভব,’’ বললেন তিনি।
যদিও বাসিন্দারা পুরসভার দাবি মানতে নারাজ। বুধবার দুপুরের বৃষ্টিতে কৃষ্ণনগর শহরের চুনারিপাড়া, কাঠালপোতা, বৌবাজার, বৈষ্ণবপাড়া, মঙ্গলাপাড়া, অরবিন্দপল্লি, উকিলপাড়া-সহ অন্যান্য নিচু এলাকাগুলোতে জল জমে যায়। চুনারিপাড়া এলাকায় প্রায় ৫০০
মিটার রাস্তাজুড়ে হাঁটুজল দাঁড়িয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা লেগে যায় জল নামতে। সমস্যায় পড়েন পথচারীরা। মোটরবাইক কিংবা রিক্সায় চড়ে বাড়ির দুয়োরে গিয়ে নামলে এক কথা, নইলে নোংরা কাদা জলে পা না ডুবিয়ে, এক পা-ও চলা অসম্ভব। কোথাও আবার রাস্তা খানাখন্দে ভরা। এ দিন চুনুরিপাড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধার অভিযোগ, এলাকায় জল জমা এই প্রথম নয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় হাঁটু জল জমে যায়। বর্ষাকালে অবস্থা আরও খারাপ। অগত্যা নিকাশিনালার নোংরা জলের ওপর দিয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। পথচলতি আরও এক জন খানিক ক্ষোভের সুরেই বললেন, ‘‘বললেই হল, মোটেই নিয়মিত নিকাশিনালা পরিষ্কার হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy