Advertisement
E-Paper

চোদ্দো বছর পরে জলে ফিরল পুকুর

টলটল করত পুকুরের জল। মাছও মিলত। এলাকার বাসিন্দারা কমবেশি সকলেই ব্যবহার করত পুকুরটি। কিন্তু সে সবই অতীত। গত ষোলো বছরে এক প্রকার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছিল রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকের আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কারিগরপাড়ার ২ একর ১১ শতকের ওই পুকুরটি। এলাকার সমস্ত নোংরা জল এসে পড়ত সেটিতে।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
তৈরি হচ্ছে নিকাশি নালা। — নিজস্ব চিত্র

তৈরি হচ্ছে নিকাশি নালা। — নিজস্ব চিত্র

টলটল করত পুকুরের জল। মাছও মিলত। এলাকার বাসিন্দারা কমবেশি সকলেই ব্যবহার করত পুকুরটি।

কিন্তু সে সবই অতীত। গত ষোলো বছরে এক প্রকার আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছিল রানাঘাট ১ নম্বর ব্লকের আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কারিগরপাড়ার ২ একর ১১ শতকের ওই পুকুরটি। এলাকার সমস্ত নোংরা জল এসে পড়ত সেটিতে। স্বাভাবিক ভাবেই মাছের বদলে মশা-পোকামাকরের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল পুকুরটি। দুর্গন্ধে টেকা দায়। প্রশাসনের কাছে বহু অনুনয়-বিনয় করেও কোনও লাভ হয়নি বাসিন্দাদের। ঘুরেও তাকায়নি পুরসভা।

দীর্ঘ চোদ্দো বছরের লড়াইয়ে অবশেষে শিকে ছিড়ল। পুর দফতর শেষমেশ নিকাশি নালা তৈরিতে ৬৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে।

তিন দিন হল কাজ শুরু হয়েছে। রানাঘাট পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ নিত্যানন্দনগরের মোড় থেকে রাস্তার ধার দিয়ে বড় নিকাশি নালা তৈরি হচ্ছে। তিন ফুট চওড়া-সাড়ে পাঁচ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ২৩৫ মিটার দীর্ঘ নালাটি গিয়ে মিশবে অন্য একটি নিকাশি নালায়। সেই নালার মাধ্যমে শেষমেশ নোংরা জল গিয়ে পড়বে চুর্ণী নদীতে।

স্থানীয় কাউন্সিলর পবিত্র ব্রহ্ম বলেন, “ওই এলাকায় নতুন নিকাশি নালা তৈরি করা হচ্ছে। পুরনো নালারও কিছুটা সংস্কার করা হবে। বেশ খানিকটা জায়গায় মাটির তলায় পাইপ বসানো হবে। এ জন্য ৬২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই কাজও শুরু হয়েছে।”

এত দিন রানাঘাট পুরসভা এলাকার একটি অংশের নোংরা জল এসে পড়ত শহরের পাশ্ববর্তী ওই পুকুরটিতে। সেখান থেকে নর্দমা দিয়ে চলে যেত চুর্ণী নদীতে। এর ফলে পুকুরের জল ব্যবহার তো দূরস্ত, দুর্গন্ধে আশপাশের বাসিন্দাদের টেকা দায় হয়ে উঠেছিল। বর্ষার সময়
আরও ভয়াবহ হত পরিস্থিতি। গোদের উপর বিষফোঁড়া মশক-বাহিনী। তাদের অত্যাচারে রোগভোগও লেগেই ছিল। অথচ এখানেই এক সময় মাছ চাষ হত।

শেষমেশ ২০০২ সালে পুকুরটাকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয় এলাকার লোক। এঁদের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় যুবক কেনেডি ধর। এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেছিলেন শ্রীনাথপুর-সাটিগাছা নাগরিক কমিটি। তিনিই সেই সংগঠনের অন্যতম আহ্বায়ক। পুকুর লাগোয়া তাঁর বাড়ি। কেনেডি বলেন, “এতগুলো বছর, পুকুরটাকে কী লড়াই যে করতে হয়েছে, তা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। পরিবেশ দফতর, মৎস দফতর, দূষন নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। এ দোর থেকে অন্য দোরে, হত্যে দিয়ে বেরিয়েছি। কাজটা যে শুরু হয়েছে, সেটা দেখেই ভাল লাগছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘ক্রমশ আশপাশে নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠছিল। ২০০০ সালের পর থেকে পুকুরের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। ঘরবাড়ির নোংরা জল তো বটেই, সেই সঙ্গে বিভিন্ন কারখানার নোংরা-আবর্জনা, এমনকী একটি বেসরকারি হাসপাতালের বর্জ্যও ওই পুকুরে এসে পড়ত। তখনই ঠিক করি, এ বার একটা ব্যবস্থা করতে হবে।”

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে রানাঘাট পুরসভার পুরপ্রধান পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির কথা আমরাও পুরসভার পক্ষ থেকে পুরদফতরকে বলেছিলাম। পুরদফতর অর্থ বরাদ্দ করেছে। কাজ শুরু হয়েছে।”

Ranaghat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy