E-Paper

কাঁটাতার পেরিয়ে মিলবে চরের জমি

জমি জটের কারণে সরকারি সমস্ত প্রকল্প থেকে আমরা বঞ্চিত, জমিতে আমাদের আইনি স্বীকৃতি ছিল না।

অমিতাভ বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৯
শেষ বারের মতো খতিয়ে দেখার কাজ চলছে চরমেঘনা গ্রামে।

শেষ বারের মতো খতিয়ে দেখার কাজ চলছে চরমেঘনা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র।

জমি মাপার ত্রিস্তর প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের মৌজার জমি পেতে চলেছে হোগলবেড়িয়ার কাঁটাতারের বেড়ার ওপারের চর মেঘনার বাসিন্দারা।

১০০ বছর আগে থেকেই এই গ্রামের বাসিন্দারা বসবাস করলেও ভারত ভাগের পরেও তারা জমির মালিক স্বীকৃতি পাননি। দীর্ঘদিনের দাবি মতো অবশেষে জমির মালিক হচ্ছেন তারা। তা ছাড়াও জমিজট কেটে গেলে গ্রামের কাঁটাতারের বেড়াও বাংলাদেশের দিকে সরে যাবে বলে আশাবাদী গ্রামের বাসিন্দারা।

গ্রামের দীপঙ্কর বিশ্বাস বলেন, ‘‘২০১৬ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলেও সেই তালিকায় চরমেঘনার নাম ছিল না। যদিও চর মেঘনা গ্রামটি ছিটমহল ছিল না। ভারতীয় ভূখণ্ডে ছিল আমাদের গ্রামটি। সেই সময় যে দুই দেশের ভূখণ্ড বিনিময় তালিকা বেরিয়েছিল সেখানে আমাদের গ্রামের নাম ছিল না।’’

দেবব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আইন সম্মত ভাবে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করতে গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে তৎকালীন বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস পরেই এই গ্রামকে ভারতে অন্তর্ভুক্তির তালিকায় স্থান পায়। এর পরে জমিজট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়েছি, শেষমেষ গত নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। গত কয়েক মাসে জোর কদমে জমি মাপার কাজ প্রায় শেষের দিকে। করিমপুর ১ ভূমি সংস্কার দফতর থেকে খোঁজ পেয়েছি খুব শীঘ্রই আমাদের জমির বৈধ কাগজপত্র দেওয়া হবে।’’

গ্রামের মহিতোষ সরকার, দীপঙ্কর মণ্ডল-সহ একাধিক বাসিন্দাদের দাবি, ভারতের অন্তর্ভুক্ত হলেও আমাদের গ্রামের জমি বাংলাদেশের চর পাকুরিয়া ও সেখপাড়া মৌজার অন্তর্গত ছিল। জমি জটের কারণে সরকারি সমস্ত প্রকল্প থেকে আমরা বঞ্চিত, জমিতে আমাদের আইনি স্বীকৃতি ছিল না। আমাদের শুধুমাত্র মাথার উপর আকাশ ছিল। কিন্তু পায়ের তলায় জমি না থাকার কারণে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হতো।

গ্রামের অমিত মাহাতোর দাবি, দীর্ঘদিন থেকে আমরা কাঁটাতারের বেড়ার এ পারে অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা নিয়ে বসবাস করছি। আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করেছিলাম, গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে বাংলাদেশের দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হবে। কিন্তু জমিজটের কারণে এই বিষয়টিও থমকে ছিল। আশা করছি, আমাদের গ্রামের জমি জট মিটে গেলে কাঁটাতারের বেড়ার যন্ত্রণা থেকেও মুক্তি পাব।

ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওই গ্রামটিতে ১৪০ ঘর মানুষের বসবাস। মোটামুটি প্রায় ১২০০ লোক ওখানে বসবাস করেন। ওই গ্রামটিতে মোট ৫৮৩ একর জমি রয়েছে। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের কাজও প্রায় শেষ। তা ছাড়াও ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের মাথাভাঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে সরকারি জমি চিহ্নিতকরণের কাজও শেষ। নদীর তীর বরাবর সরকারি জমিতে অদূর ভবিষ্যতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ অনেকটাই ত্বরান্বিত হবে। জমি, পরিমাণ ও প্লট নম্বর চাষিদের সঙ্গে নিয়ে ঠিক করে ফেলা হয়েছে।

করিমপুর ১ ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুমনকুমার পাল বলেন, ‘‘নভেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নির্দেশ মতো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জমি সার্ভের কাজ এক একপ্রকার শেষ। ত্রুটি বিচ্যুতি আছে কিনা সেগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জমির নকশা প্রিন্ট করে পাঠিয়ে দিলেই আমরা শেষবারের মতো মিলিয়ে নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দাদের জমির স্বীকৃতি দিতে পারব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Karimpur Indo-Bangladesh Border

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy