সদ্য প্রকাশিত মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে রাজ্যে প্রথম দশের তালিকায় ৬৬ জনের মধ্যে নদিয়ার প্রতিনিধি মাত্র এক জন। শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের প্রজ্জল দাস তালিকায় ১৪ জনের সঙ্গে নবম স্থানে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই সাফল্যের পিছনে তার গৃহশিক্ষকদের অবদানও বড় কম নয়। ফলে, সরকারি স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষাদান হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছেই।
মাধ্যমিকের মতো বড় মাপের পরীক্ষায় ইদানীং সে ভাবে দাগ কাটতে সক্ষম হচ্ছে না নদিয়ার ছাত্রছাত্রীরা। একদা বিদ্যাচর্চার জন্য খ্যাত নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর প্রভৃতি জনপদে সমৃদ্ধ এই জেলার বিদ্যাগৌরব এখন অনেকটাই স্তিমিত। ফলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের শীর্ষ তালিকায় একটা বা দুটো সাফল্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় নদিয়ার মানুষকে।
এ বার মাধ্যমিকের ফলাফলেও সেই প্রবণতা স্পষ্ট। যদিও জেলার শহরগুলির তুলনায় গ্রামীণ এলাকার পড়ুয়ারা তুলনায় ভাল ফল করেছে। প্রথম ২০ জনের তালিকায় কৃষ্ণনগর শহর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ জন রয়েছে। এর পরেই তালিকায় স্থান তেহট্টের। সেখানকার চার জন এবং করিমপুরের ৩ জন পরীক্ষার্থী জেলার সেরা কুড়ির মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। শান্তিপুরেরও তিন জন আছে ওই তালিকায়। কল্যাণীর আছে দু’জন। এ ছাড়া চাকদহ এবং নবদ্বীপের এক জন করে পড়ুয়া ওই তালিকায় জায়গা পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর নদিয়ায় মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার বেশি ছিল। তবে শিক্ষামহলের মতে, জেলার সরকারি স্কুলে মাথাগুনতি বাড়লেও পড়ুয়াদের গুণগত মান সে ভাবে বাড়ছে না। সম্পন্ন পরিবারের মেধাবী পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে বেসরকারি স্কুলে। সরকারি স্কুলে যারা পড়তে আসছে তাদের মধ্যে মধ্যমেধার সংখ্যাই বেশি। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। বস্তুত তারাই মেধা তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছে। তবে তারা সংখ্যায় যথেষ্ট কম।
শিক্ষকদের একাংশের মতে, সরকারি স্কুলশিক্ষার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না অভিভাবক এবং পড়ুয়ারা। যদিও শিক্ষকদের বড় অংশই মনে করেন যে কোনও ছাত্রকে সুশিক্ষিত করে তার জীবন গড়ে দিতে আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান হল স্কুল। কিন্তু ইদানীং সন্তানের সাফল্যের প্রশ্নে অভিভাবকদের ভাবনার ধরনধারণ বদলে গিয়েছে। তাতে সরকারি স্কুল পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন এবিটিএ-র নদিয়া জেলা সম্পাদক।
অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তীর মতে, “সামগ্রিক ফলাফলের নিরিখে রাজ্য জুড়ে মাধ্যমিকের ফলের সঙ্গে সঙ্গতি রয়েছে নদিয়ার ফলেরও। ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে বেশির ভাগ স্কুলের পড়ুয়ারা। কিন্তু মেধা তালিকায় চমক লাগানোর মত ফল হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে সকলে মিলে ভাবতে হবে।”
প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি সংগঠনের নদিয়া জেলা সভাপতি সুজয় মুখোপাধ্যায় মনে করেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি স্কুলে অস্বাভাবিক ছুটি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। তার প্রভাব পড়েছে ভর্তির সময়েও। আমরা সংগঠনগত ভাবে বিষয়টি নিয়ে আপত্তিও জানিয়েছি। উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা পঠনপাঠনের সময় কম পাচ্ছে। তারা স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে, ফলে তারই প্রভাব পড়ছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)