E-Paper

ভক্তদের অন্নেই রান্না হবে ভোগ

সেই ১৩৪০ সাল থেকে এমন ব্যতিক্রমী ভাবনায় দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়ে আসছে ভালুকায়।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৩১
ভালুকার আদি সর্বজনীন বারোয়ারিতে এ ভাবেই হয় অষ্টমীর ভোগ।

ভালুকার আদি সর্বজনীন বারোয়ারিতে এ ভাবেই হয় অষ্টমীর ভোগ। নিজস্ব চিত্র।

ভক্তের আনা অন্ন ব্যতীত মহাষ্টমীর ভোগ মুখে রোচে না ভগবতীর! নবমীর সকালে এলাকার মানুষ যে যার বাড়ি থেকে পিতলের হাঁড়িতে সুগন্ধী আতপ চাল, মুগের ডাল, আনাজ এবং তেল মশলা পৌঁছে দেন ভালুকার আদি সর্বজনীন বারোয়ারি তলায়। সেখানে প্রস্তুত সারি সারি উনুন। এর পরে সারা দুপুর দফায় দফায় প্রতিটি হাঁড়িতে রান্না হয় খিচুড়ি ভোগ। হাঁড়ি সমেত সেই ভোগ নিবেদন করা হয় দুর্গাকে। গ্রামবাসীদের দেওয়া সমস্ত আনাজ একত্রিত করে রান্না হয় একটি ‘পাঁচ আনাজের’ তরকারি।

সেই ১৩৪০ সাল থেকে এমন ব্যতিক্রমী ভাবনায় দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়ে আসছে ভালুকায়। আশ্চর্য ওই ভোগের গল্প শোনাচ্ছিলেন ৯০ ছুঁইছুঁই গোপাল কর্মকার। তাঁর থেকে মাত্রই কয়েক বছর বেশি তাঁর গ্রামের পুজোর বয়স। গৌরাঙ্গ সেতু হয়ে কৃষ্ণনগরগামী রাজ্য সড়ক থেকে একটু ভিতরে ঢুকেই ভালুকা। নবদ্বীপ শহর থেকে কমবেশি ১০ কিলোমিটার দূরত্বের ভালুকা ২৭ গ্রামের মধ্যমণি। বর্ধিষ্ণু গ্রামটিতে সে কালে কোনও দুর্গাপুজো হত না। অতি উৎসাহী কিছু মানুষ হয়ত নবদ্বীপে পুজো দেখতে আসতেন। কিন্তু সে আর ক’জন।

কৃষিপ্রধান ভালুকায় গড়াই পরিবারগুলি ছিল সম্পন্ন। তাদের হাত ধরেই দুর্গাপুজোর শুরু। বদ্রীনাথ গড়াই, বসন্ত সাধুখাঁ, বক্রেশ্বর গড়াই,বাদল গড়াই, খুদু গড়াই প্রমুখের উদ্যোগে ৯২ বছর আগে পত্তন হয়েছিল ভালুকা সর্বজনীন বারোয়ারির, জানালেন শিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য। সে কালে স্থানীয় কৃষকেরা মহাজনদের কৃষিজমি দাদনে চাষ করত। উৎপন্ন ফসলের একটা অংশ ঈশ্বরের নামে কৃষকদের থেকে দান হিসাবে নেওয়া হত। ‘ঈশ্বরদি’ নামে ওই দানের অর্থ এবং অন্যাদের থেকে আরও কিছু চাঁদা সংগ্রহ করে ভালুকা সর্বজনীনের সূচনা হয়।

পুজোর উদ্যোক্তা তথা স্থানীয় ব্যবসায়ী দেবাশিস সাধুখাঁর কথায় ভালুকার এক দিকে আদিবাসী অধ্যুষিত টিয়াবালি, একতারপুর, বনগ্রাম, মনিপোতা। অন্য দিকে, শিমুলগাছি, কুন্দপাড়া, বাঁধের পাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস। গ্রামের বড় অংশের মানুষ তফশিলি জাতিভুক্ত। সবমিলিয়ে একটা মিশ্র সামাজিক পরিমণ্ডলে ভালুকার দুর্গাপুজো আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nabadwip

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy