রাজ্যে পঞ্চম এবং নদিয়া জেলায় প্রথম হিসাবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করলেন রানাঘাটের বাঙালি মহিলা রুম্পা দাস। রানাঘাটের সুব্রত ঘোষও রুম্পার সঙ্গেই পা রেখেছিলেন এভারেস্টের শীর্ষবিন্দুতে। প্রথম জন ঠিক ভাবে নেমে আসতে পারলেও দ্বিতীয় জন পারেননি। ফলে, আনন্দের চেয়েও আর এক চেনা মানুষকে হারানোর যন্ত্রণায় মন ভার রুম্পার স্বামী সুমন বসুর।
রানাঘাট শহরের নাসরা কলোনির বাসিন্দা রুম্পা দাস। ছোট থেকেই ভালবেসে গিয়েছেন পাহাড়। ২০২১ সালে কৃষ্ণনগরের ‘ম্যাক’-এর (মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর) হয়ে এভারেস্ট অভিযানে সামিল হয়েছিলেন কুপার্স কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা। কিন্তু সেই সময়ে মাঝপথেই ফিরতে হয়েছিল তাঁকে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে নেপালের কাঠমান্ডু হাসপাতালে বেশ কিছু দিন ভর্তি ছিলেন। তবে মনের জোর হারাননি। সে বার না পারলেও চার বছর পরে তিনি সর্বোচ্চ শৃঙ্গজয়ের লক্ষ্যে সফল হলেন।
জানা গিয়েছে, প্রথম বার ঋণ করে ও স্বামী-স্ত্রীর সঞ্চয় ভেঙে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা খরচ জোগাড় করেছিলেন রুম্পা। এ বারের অভিযানের জন্য ৩০ লক্ষ টাকার খরচ জোগাড় করতে বাড়ি বন্ধক দিতে হয়েছে। এর জন্য অবশ্য রুম্পা পাশে পেয়েছেন তাঁর স্বামীকে। তিনিও এক জন পর্বতারোহী। শনিবার রুম্পার স্বামী সুমন বসু বলেন, ‘‘প্রায় সাত দিন আগে শেষ বার স্ত্রীর কথা হয়েছিল। এজেন্সির মাধ্যমে খবর পেয়েছি— ও সুস্থ আছে। বেস ক্যাম্পে নেমে আসতে এখনও দুই দিন সময় লাগবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘স্ত্রীর জন্য উৎকণ্ঠা এবং একইসঙ্গে বন্ধু হারানোর ব্যথায় অস্থির লাগছে! সুব্রত আমাদের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী।’’
২০১৫ সালে স্বামীর সঙ্গে ম্যাক থেকেই রক ক্লাইম্বিং-এর প্রশিক্ষণ নেন রানাঘাটের স্কুল শিক্ষিকা। গত ৩১ মার্চ হাওড়া থেকে মিথিলা এক্সপ্রেসে তিনি যাত্রা শুরু করেন। সঙ্গী হয়েছিলেন ম্যাকের সদস্য রানাঘাটের সুব্রত ঘোষ। অন্য দিকে, শুক্রবারের মতো শনিবারও সুব্রত বাড়িতে ছিল থমথমে পরিবেশ। পরিবারে আত্মীয়-পরিজনদের চোখেমুখে উৎকণ্ঠা। শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন— এক অন্যরকম ইতিহাস হয়তো লেখা হত, ওঁরা দু’জনেই যদি একসঙ্গে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন।
এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায় বলেন, ‘‘পঞ্চম বাঙালি মহিলা হিসেবে এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেছেন রুম্পা। পাশাপাশি, সুব্রতের বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)