রংবাহারি। ইদের আগে চুরি কেনার ভিড়। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। সারাক্ষণই ঝিরঝিরে বৃষ্টি লেগেই রয়েছে। উঠোন পেরোনোই দুষ্কর। তাই বলে কি উৎসবের প্রস্তুতি মার খাবে! নাহ্ তা কী করে হয়।
বৃষ্টিকে হারিয়ে লোকজন সকাল থেকেই বেড়িয়ে পড়েন ইদের শেষ সময়ের বাজার করতে। দিনকয়েক ধরেই অষ্টপ্রহর বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। সে সবকে তোয়াক্কা না করে সোমবার সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদের চতুর্দিকের লোকজন পিল পিল করে বেড়িয়ে পড়েছেন বাজারে। জামাকাপড় থেকে শুরু করে মনোহারীর দোকান—সর্বত্রই ক্রেতাদের ভিড়। ইদের যে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি! ফলে সমস্ত দুর্যোগকে হারিয়ে লোকজন বাজারমুখী।
প্যাচপ্যাচে কাদা রাস্তা পেরিয়ে এ দিন সালার, খড়গ্রামের নগর, শেরপুর, বড়ঞার ডাকবাংলা, ভরতপুর, ডোমকল, বহরমপুর, জলঙ্গি, রঘুনাথগঞ্জ, জঙ্গিপুর, জলঙ্গির লোকজন সকাল থেকেই বাজারমুখো। তবে কান্দি মহকুমা এলাকার বিভিন্ন বাজারগুলির ভিড় ছিল রীতিমতো চোখে পড়ার মতো। দোকানের সামনে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে লোকজন কেনাকাটা করছেন, সারাদিনই এই ছবি ধরা পড়ল।
সপ্তাহ খানেক ধরেই জেলাজুড়ে বৃষ্টি চলছে। লোকজন ভেবেছিলেন আকাশ পরিষ্কার হলেই ইদের বাজার সারবেন। কিন্তু বৃষ্টি বিরতি নেওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে এ দিন বৃষ্টির মধ্যেই লোকজন বাজারে বেড়িয়ে পড়েন। সালারের কাপড় ব্যবসায়ী চন্দন কাজী বলেন, “রোজার শুরুর দিকে প্রবল গরম পড়ছিল। সে সব লোকজন সে ভাবে বাজারমুখো হতে পারেননি। এ দিকে বৃষ্টিতেও কয়েকদিন ধরে লোকজন ঘরবন্দি ছিলেন। কিন্তু ইদেরও তো আর দেরি নেই, ফলে এ দিন প্রাকৃতিক গোলযোগকে হেলায় হারিয়ে সকলেই বাজারে এসেছেন। ব্যবসায়ীদেরও দুশ্চিন্তা কাটল।’’
এ দিন সকাল সকাল কান্দি হিজলের বাসিন্দা জাকির হোসেন সপরিবারে টোটো ভাড়া করে কান্দি বাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। জাকির হোসেন বলেন, “আমরা চাষি মানুষ। টাকা পয়সার ব্যবস্থা না করে বাজারমুখো হয় কী করে! তাই শেষের দিকে যতই বৃষ্টি হোক বাজারে তো আসতেই হবে। কারণ বাড়ির ছোটরা তো বটেই বড়রাও বছরের এই পবিত্র দিনে নতুন জামা-কাপড় পড়ে ইদের নমাজ পড়তে যেতে চান। ফলে কেনাকাটা তো অবশ্যই করতে হবে।” খড়গ্রামের বাসিন্দা লিটন শেখ জানান, ইদের সময় সকলকে নতুন জামা কাপড় দিতে পারলে ভালো লাগে। ইদের দিন নতুন জামাকাপড় পড়ে সকলেই বাড়ি থেকে বার হবে—এটাই রীতি। ফলে বৃষ্টির দিনেও বাজারে এসেছেন। কান্দির ব্যবসায়ী মহিতোষ দত্ত বলেন, “শেষের দিকে বৃষ্টির মধ্যে বাজার যে এ ভাবে জমে উঠবে, তা ভাবতেই পারিনি। ভেবেছিলাম বৃষ্টিতে হয়ত লোকজন সে ভাবে কেনাকাটা করতে আসবেন না। কিন্তু সে সব কেবলই আশঙ্কা।’’ কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকেশ্বর প্রামাণিক বলেন, “আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষি কাজের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই বাজার সব সময়ই একটু দেরি হয়। এ বারও তাই হয়েছে। কিন্তু শেষ মূহুর্তে যে ভাবে বৃষ্টি শুরু হল, তাতে ভেবেছিলাম আবার বাজারে ক্ষতি হবে। কিন্তু মানুষ বাজারে এসেছেন এবং কেনাকাটা করতে পেরেছে। এতে আমরা খুশি।”
কেবল মুর্শিদাবাদই নয়, পড়শি নদিয়ার লোকজন মুষলধারা বৃষ্টিকে সে ভাবে পাত্তা না দিয়ে সোমবার সকাল থেকে ইদের কেনাকাটা করতে বাজারমুখী। এ দিন নবদ্বীপ, মায়াপুর, ধুবুলিয়া, রানাঘাট, চাপড়া, নাকাশিপাড়া, দেবগ্রামের লোকজন ইদের শেষ সময়ের সময়ের কেনাকাটা করতে বাজারে ভিড় জমান। সকাল থেকেই ছিঁটেফোঁটা বৃষ্টি। রাস্তা-ঘাটে ঈষৎ কাদা জমে গিয়েছে। মেঠো রাস্তার সেই কাদা মাড়িয়ে বড় আন্দুলিয়ার খোকন শেখ সস্ত্রীক চাপড়ায় হাজির ইদের বাজার করতে। আধভেজা অবস্থাতেই প্রায় দুপুর অবধি কেনাকাটা সেরে খোকন বললেন, ‘‘কী আর করা যাবে। এই ইদ তো বছরে একবারই আসে। বৃষ্টি বলে তো আর চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকা যায় না।’’ এ দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গিয়েছে কাপড়ের দোকানগুলির সামনে। যুবক-যুবতীদের হাল ফ্যাশন জিন্স, টপ, টি-শার্ট, চুড়িদারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, এমনটাই জানালেন নাকাশিপাড়ার বস্ত্র-ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন সাহা। দেবগ্রামের চৌরাস্তা মোড়ের বাসিন্দা হাসান তানবীর এ দিন সন্ধ্যায় ছাতা মাথায় দিয়ে চলে যান পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে বাহারি জুতো কিনতে। একই ভাবে দেবগ্রামের শাহরুখ শেখ বৃষ্টি-কাদা ঠেলে বাজারমুখী। তিনি জানান, রমজান মাস শেষ হতে চলল। কয়েক ঘণ্টা পরেই খুশির ইদের চাঁদ উঠবে। কেনাকাটা না করে এখনও কি ঘরে বসে থাকা যায়! জেলার বিভিন্ন প্রান্তের খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দোকানের সামনে থিকথিকে ভিড়টাই বলে দিল, উৎসবের কাছে হেরে গেল ভরা বর্ষা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy