ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্ঘটনার খবর শুনেছিলেন সংবাদমাধ্যমে। ভেসে আসছিল মৃত্যুর আলাদা আলাদা পরিসংখ্যান। সেই থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে যাত্রা করা ছেলের সঙ্গে টানা যোগাযোগের চেষ্টা করে গিয়েছেন নদিয়ার বাসিন্দা সুনীল হালদার। সুনীলের ছেলে নবীন কেরলের পরিযায়ী শ্রমিক। ছুটি কাটিয়ে শুক্রবার করমণ্ডলে চেপে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার রাতে ট্রেনে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেন। খবর আসার বেশ কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও নবীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি তাঁর পরিবার। দুর্ঘটনার খবরে বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন পড়শি এবং আত্মীয়রাও। এর পর রাত ২টো ৪৫ মিনিট নাগাদ ফোন বেজে ওঠে সুনীলের। এক মুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ‘হ্যালো’ বলতেই উল্টো দিক থেকে ভেসে আসে, নবীনের কণ্ঠস্বর। নবীন বলেন, ‘‘বেঁচে আছি বাবা।’’ দীর্ঘ উদ্বেগের পর স্বস্তির ফোনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুনীল।
সুনীল জানিয়েছেন, অন্যের মোবাইল থেকে ফোন করেছিল ছেলে। তার আগে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাতেই প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা কাটাতে হয়েছিল তাঁদের।
হালদার পরিবারের উদ্বেগ কমলেও এখনও যোগাযোগ করা যায়নি নদিয়ার করিমপুর থেকে কেরলে কাজ করতে যাওয়া চার পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ফোন হাতে অপেক্ষা করছেন তাঁদের পরিবারও।
জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে কেরলে কর্মরত অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছিলেন। দিন দশেকের ছুটি কাটিয়ে করমণ্ডলে চেপে কেরল ফিরছিলেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নদিয়ার করিমপুর এলাকার বেশ কয়েক জন পরিযায়ী শ্রমিক। ছিলেন নবীনও।
করিমপুর পাটাবুকা এলাকার ৮ জন, লক্ষ্মীপাড়া এলাকার ৩ জন, থানারপাড়া এলাকার ২ জন এবং হুগলবেড়িয়ার ১ জন পরিযায়ী শ্রমিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতে ছিলেন। নবীন-সহ আট জনই ছিলেন একই কামরায়। দুর্ঘটনার কারণে গুরুতর আঘাত না পেলেও তাঁরা প্রত্যেকেই চোট পান। দুর্ঘটনার জেরে বেশিরভাগের ব্যাগ খোয়া গিয়েছে। সেই ব্যাগগুলিতেই তাঁদের টাকাপয়সা-সহ যাবতীয় নথি ছিল। সারা রাত স্থানীয় একটি স্কুলে রাত কাটানোর পর এক অটোচালকের সাহায্যে সকাল সাতটা নাগাদ বালেশ্বর স্টেশনে পৌঁছন নবীনরা। প্রাণে বাঁচলেও দুর্ঘটনার ক্ষত, শেষ সম্বল হারানোর যন্ত্রণা, অশক্ত শরীর নিয়ে ঘরে ফিরছেন তাঁরা প্রত্যেকে।
নবীনদের খোঁজ পাওয়া গেলেও এখনও খোঁজ মেলেনি নদিয়ার বহু পরিযায়ী শ্রমিকের। ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে পরিবারের। নবীন বলেন, ‘‘বাড়ি থেকে সবাই একসঙ্গে এসেছিলাম। তার পর স্টেশন থেকে কে কোথায় উঠেছে, বলতে পারব না। আমরা ৮ জন ঠিক আছি , কিন্তু বাকিদের ফোনে পাচ্ছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy