E-Paper

স্কুলে মদের আসর, নাম জড়াল তৃণমূল নেতার ছেলের

বগুলা বাজারে জিএসএফ প্রাথমিক স্কুলটি জেলার অন্যতম পুরনো স্কুল। স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৮ জন। শিক্ষক আছেন চারজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:৪১
স্কুলে মদের বোতল। বগুলায়।

স্কুলে মদের বোতল। বগুলায়। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে ক্লাস রুমের ভিতরে মদের আসর!

শিক্ষকদের অভিযোগ, সেই আসরের অন্যতম সদস্য হল শাসক দলের এক নেতার ছেলে ও সিভিক ভলান্টিয়ার। অভিয়োগ, প্রায় দিনই স্কুল ছুটির পর বগুলা জিএসএফ প্রাথমিক স্কুলের ভিতরে মদের আসর বসানো হয়। সেই মদের আসর হাতেনাতে ধরে ফেলেন স্কুলের এক শিক্ষক। তিনি সেই আসরের ভিডিও করেন। সেই ভিডিও সামনে আসতেই রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পুলিশ ও শিক্ষক মহলে। যদিও ভিডিও-এর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার। এই ঘটনায় একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

বগুলা বাজারে জিএসএফ প্রাথমিক স্কুলটি জেলার অন্যতম পুরনো স্কুল। স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ৩৮ জন। শিক্ষক আছেন চারজন। দিন কয়েক আগে একদিন স্কুল ছুটি হয়ে গেলেও সহ শিক্ষক বিমান মিদ্দা স্কুলে থেকে যান। তিনি স্কুলের বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেরক্স করার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক অফিস ঘরে তালা দিয়ে চাবিটা পাশে এক দোকানদারের কাছে রেখে যান। কিছু সময় পর বিমানবাবু স্কুলে এসে মদের আসর হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তাঁর কথায়, “আমি স্কুলে ঢোকার সময় দেখি একজন যুবক সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আমাকে দেখেই সে পালিয়ে যায়। আমি দোতলায় উঠে দেখি ক্লাস ঘরের ভিতরে টেবিল পেতে মদের আসর বসানো হয়েছে। টেবিলের উপর মদের বোতলের সঙ্গে খাবারদাবারও ছিল। আমাকে দেখেই মদের আসরের লোকজন হুড়মুড়িয়ে পালিয়ে যায়। আসরে একজন স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে ও সিভিক ভলান্টিয়ারও ছিল।” তিনি বলেন, “আমি গোটা ঘটনার ভিডিও করি। প্রতিবেশীদেরও ডেকে গোটা বিষয়টি দেখাই। আমাদের কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানাই। এমনকি পুলিশকেও বিষয়টি জানানো হয়। প্রতিবেশীরাও জানান যে প্রায়ই স্কুল ছুটির পর এই ক্লাস ঘরে মদের আসর বসানো হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দা তথা হাঁসখালি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বিজেপির আনন্দ কবিরাজ বলেন,“আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর আছে তৃণমূল নেতার ছেলে সিভিক ভলান্টিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে নিয়মিত ওই স্কুলে মদের আসর বসাত। এর থেকে লজ্জার আর কী থাকতে পারে।” তৃণমূলের হাঁসখালি-২ সাংগঠনিক ব্লক সভাপতি শিশির রায় বলেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা জানা নেই। খোঁজ না নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”

এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অস্বস্তিতে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘স্কুলের ভিতরে মদের আসর বসানো অত্যন্ত জঘন্য কাজ। যারা এই কাজে জড়িত তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’’ তবে স্কুলের চাবি কেন একজন দোকানদারের কাছে রাখা হবে সেই প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। যদি এর সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক সঞ্জীবকুমার ঠাকুর। তিনি বলেন, “আমি কিছু দিন আগে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দিয়েছি। তার অনেক আগে থেকেই স্কুলের চাবি ওই দোকানদারের কাছে থাকত।” তাঁর দাবি, ‘‘স্কুলের চাবি নিজের কাছে রাখতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে।” তবে স্কুলের এক সহ শিক্ষক নিশীথ রঞ্জন বিশ্বাসের দাবি, “ওই দোকানদারের কাছে কখনওই নিয়মিত স্কুলের চাবি থাকত না।”

হাঁসখালি চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক তন্দ্রা ঘোষ বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” রানাঘাট পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লাল্টু হালদার বলেন,“স্কুলের তরফে অভিযোগ দায়ের করা হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

bagula TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy