E-Paper

প্রতিবন্ধকতা উড়িয়ে পরীক্ষায় দুই বোন

শান্তিপুরের বাগআঁচড়া বাজার পাড়ার বাসিন্দা দুই বোন রুমা, ঝুমা। ছোটবেলা থেকে দু’জনেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লড়াই করে চলেছে।

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৫ ০৮:২৫
পরীক্ষা কেন্দ্রে রুমা আর ঝুমা। নিজস্ব চিত্র

পরীক্ষা কেন্দ্রে রুমা আর ঝুমা। নিজস্ব চিত্র abppranab@gmail.com

এক বোন মূক ও বধির। অন্য জন স্নায়ু-সমস্যায় আক্রান্ত। ঠিকমতো হাঁটা-চলা করতে পারে না। ক্রমশ হারাচ্ছে স্মৃতিশক্তিও। তবে নিজেদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল দু’বোন। এ বার সেই জেদ আঁকড়ে উচ্চ মাধ্যমিকও দিচ্ছে। ওদের নাম রুমা মল্লিক এবং ঝুমা মল্লিক।

শান্তিপুরের বাগআঁচড়া বাজার পাড়ার বাসিন্দা দুই বোন রুমা, ঝুমা। ছোটবেলা থেকে দু’জনেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লড়াই করে চলেছে। রুমা মূক ও বধির। ঝুমা স্নায়ুবিক সমস্যার রোগী, সে ঠিকমতো হাঁটা-চলা করতে পারে না। একই সঙ্গে ধীরে ধীরে কমে আসছে স্মৃতিশক্তি। তবে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দুই বোন পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। নিজেদের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে মাধ্যমিকও পাশ করেছে। দু’জনেই স্থানীয় বাগআঁচড়া হাইস্কুলের ছাত্রী। এই স্কুল থেকেই দু'বছর আগে মাধ্যমিক পাস করে ওরা। রুমার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৩২৪ এবং ঝুমার ৩২১। এ বার বাগআঁচড়া হাইস্কুল থেকেই কলাবিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছে দুই বোন। পরীক্ষার আসন পড়েছে শান্তিপুর শহরের মিউনিসিপাল হাইস্কুলে। বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে। তবু চেষ্টার কমতি নেই।

এর আগে স্কুলে প্রতি দিন যাতায়াত করতেও সমস্যা হত ওদের। রুমা মূক ও বধির। কথা বলার পাশাপাশি কানে শুনতে সমস্যা হয়। রাস্তাঘাটে চলা-ফেরা করা, ক্লাসে পড়া শোনা এবং বোঝায় যথেষ্ট সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। অন্য দিকে, ঝুমার স্নায়বিক সমস্যায় চলা-ফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। স্মৃতিশক্তিও কমছে। পুরনো কথা ভুলে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক কিছু চেনা জিনিসও মাঝেমধ্যে চিনতে পারে না ঝুমা। দুই বোনের সঙ্গে স্কুলে প্রতি দিন যেতে হত তাদের মা রেখা মল্লিককে। বাবা শ্যামল মল্লিক পেশায় টোটো চালক। তাঁর তিন মেয়ে। ছোট মেয়েটির কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। তবে পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দের অভাব রয়েছে। পাঁচ জনের সংসার কোনও মতে গুজরান হয়। কাজেই, একই সঙ্গে একাধিক প্রতিবন্ধকতা টপকানোর লড়াই চলেছে দুই বোনের।

উচ্চ মাধ্যমিকে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে দুই বোন। ওদের ইচ্ছা, ভবিষ্যতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার। সেই লক্ষ্যেই সোমবার বাবার টোটোয় চেপে শান্তিপুর মিউনিসিপাল হাইস্কুলে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল ওরা। মা রেখা মল্লিক বলেন, ‘‘শারীরিক সমস্যা থাকলেও দু’জনেরই ইচ্ছা পড়াশোনা করার। পরীক্ষার সময়ে ওরা বাবার টোটোয় চেপে যাচ্ছে।’’

দুই বোনের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাগআঁচড়া হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপক বিশ্বাস বলেন, ‘‘এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে ওরা যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা জয় করুক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Higher Secondary Exam 2025 HS Exam 2025 Shantipur

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy