আবার সে এসেছে ফিরিয়া।
ভিডিও ক্যামেরার ছবি, মোবাইল ক্যামেরার ছবি, সব ফ্যাশনের শেষে আবার মাথা তুলছে লেন্স-লাগানো ক্যামেরা। তবে ডিজিট্যাল অবতারে।
কাজের বাজারে যে স্টিল ফটোগ্রাফির দাম বেড়েছে, তা বোঝা যায় পেশাদার ফটোগ্রাফারদের কথাতেই। দেবাশিস বিশ্বাস, সোমনাথ হালদারেরা বেশ কিছু দিন ধরেই বিয়ের ও নানা অনুষ্ঠানের ছবি তুলছেন। তাঁরা জানালেন, কয়েক বছর আগেও বিয়ের অনুষ্ঠানে মানুষ স্টিল ফটোগ্রাফিতে কম টাকা বরাদ্দ করে ভিডিও-তে বেশি টাকা খরচ করত। এখন স্টিল ফটোগ্রাফির জন্য ভাল টাকা খরচ করতে তাঁরা তৈরি। ছবি তুলে ‘ডিজিট্যাল অ্যালবাম’ বানাতে চাইছেন প্রায় সকলেই। কদর কমছে ভিডিওর। অনেকে তো বিয়েতে ভিডিও আর চাইছেনও না।
এই পেশাদার ফটোগ্রাফারদের কথায়, ‘‘মানুষের হাতে সময় কমে এসেছে ভিডিও দেখার।’’ দেবাশিস জানালেন, তাঁর তোলা শেষ ছ’টা বিয়ের কাজের মধ্যে মাত্র দুটোতে ভিডিও আর স্টিলের অর্ডার ছিল। বাকিগুলো শুধুই ‘ক্রিয়েটিভ স্টিল ফটোগ্রাফি’-র অর্ডার। যা তুলতে তাঁদের ভরসা ডিজিট্যাল সিঙ্গল লেন্স রিফ্লেক্স বা ডিএসএলআর ক্যামেরা।
পেশাদার ফটোগ্রাফির পাশাপাশি, শখের ছবি তোলাতেও ফিরে আসছে পুরোদস্তুর লেন্স-সহ ক্যামেরা। কেবল মোবাইলের ক্যামেরায় ছবি তুলে আর খুশি নন মধ্যবিত্তদের অনেকে। কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, শান্তিপুরের মতো জেলা শহরেও ক্রমশ কদর বাড়ছে ডিএসএলআর ক্যামেরার। কৃষ্ণনগরের শিশু বিশেষজ্ঞ শ্যামল ঘোষ, দন্ত চিকিৎসক শুভ্রদীপ দে, স্কুল শিক্ষক জয়ন্ত প্রামাণিক, তন্ময় বিশ্বাস, দেবব্রত সাহা, সবার হাতেই এখন নতুন ডিএসএলআর।
চক্ষু বিশেষজ্ঞ অর্পণ মুখোপাধ্যায়ের ফটোগ্রাফির শখ দীর্ঘ দিনের। তাঁর পছন্দ ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম যখন ছবি তুলতাম লোকে বলত, ডাক্তারবাবুর আবার এ কী পাগলামি। এখন দেখছি সবাই ছবি তুলছেন। দেখে খুব ভাল লাগছে।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে ছবির অন-লাইন প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী আর ফেসবুকের মতো সোশ্যাল সাইটে ছবি আপলোড করে সবাইকে দেখানো আর কমেন্ট পাওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় মানুষের মধ্যে ছবি তোলার আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষ্ণনগরের ঋদ্ধি মুখোপাধ্যায় এখন স্নাতক স্তরের ছাত্র। শান্তিপুরের অভি ঘোষ একটি সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রী।। বয়সে নবীন হলেও এর মধ্যেই ঋদ্ধি আর অভির ঝুলিতে ফটোগ্রাফিতে বেশ কয়েকটি জাতীয় আর আন্তর্জাতিক স্তরের পুরস্কার। তাদের কথায়, ‘‘আগে দেশ-বিদেশের প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠানো ভীষণ ব্যয়বহুল ছিল। এখন মাউস টিপেই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছবি পাঠানো যাচ্ছে। তাই উৎসাহ বাড়ছে ভাল ছবি তোলার।’’ যাঁরা একবার ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তুলেছেন, তাঁদের আর মোবাইলে ছবি তুলতে ভাল লাগছে না। যেমন মধুরিমা শীল শর্মা। কর্মসূত্রে মালদার একটি স্কুলের শিক্ষিকা মধুরিমা বললেন, ‘‘দিদি সম্প্রতি একটা ডিএসএলআর কিনেছে। ওটায় তুলি মাঝে মাঝে। মোবাইলে ছবি তুলে মন ভরছে না। টাকা জমাচ্ছি ক্যামেরা কিনব বলে।’’
মোবাইলের ফিক্স়ড লেন্স থেকে বেরিয়ে আর একটু পেশাদারি, উন্নতমানের ছবি তোলার আগ্রহ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরার চাহিদা বাড়ছে, জানাচ্ছেন ক্যামেরা বিক্রেতারাই। গত ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫, দুই আর্থিক বর্ষের হিসাব অনুযায়ী কৃষ্ণনগরের দেবপ্রসাদ দত্ত বিক্রি করেছিলেন যথাক্রমে ৩০ ও ৪৫টি ডি এস এল আর। আর এক বিক্রেতা মনোতোষ বিশ্বাস বলেন, তাঁর দোকানে ওই দুই বছরে ২৮টি এবং ৩৫টি ক্যামেরা বিক্রি হয়েছে।
নবদ্বীপের বিক্রেতা সুব্রত সেন বলেন, ডিএসএলআরের বিক্রি যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি সাধারণ ডিজিট্যাল ক্যামেরার বিক্রি। অন্য দিকে, ডিএসএলআরের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসায় ভাল ছবির জন্য মানুষ সেই দিকেই ঝুঁকছেন। ‘‘২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে আমার দোকান থেকে ১২টা, ২০১৪-১৫ সালে ২০টা ডিসিএলআর ক্যামেরা বিক্রি হয়,’’ বলেন তিনি। অন্যদিকে, ভিডিও ক্যামেরার বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। বছর চারেক আগেও মেরেকেটে বছরে চার-পাঁচটির বেশি ডিএসএলআর বিক্রি হত না, তা মানলেন প্রায় সব বিক্রেতাই। এ বছর ক্যামেরা কেনার ছবিটা কেমন দাঁড়ায়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে আছেন ক্যামেরা বিক্রেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy