তাকের পিছনে রাখা ঝুল পড়া লক্ষ্মীর ভাঁড়টা নামাতে গিয়ে হাত ফস্কে গেল— আর মেঝেময় এ-ওকে নিয়ে চোর পুলিশ খেলছে গুটি কয়েক পাঁচ টাকার কয়েন।
ছোট গল্পের সেই পাতা থেকে যেন হুবহু উঠে এসেছেন ওঁরা।
খবরটা পাওয়ার পর দোনামনা করছিলেন। খানিকটা লজ্জাতেও বা। এক এক বার নিজের লুকনো সঞ্চয়ে কিঞ্চিৎ শ্লাঘাও বোধ করছেন বা। তার পর চুপি চুপি বলছেন— আমার কাছে কয়েকটা টাকা আছে নেবে?
স্ত্রীর সেই লুকনো সঞ্চয়ই আজ মহা প্রাপ্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ওঁদের।
মেয়ের হারমোনিয়াম কিনে দেবেন বলে একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছিলেন কৃষ্ণনগরের সন্ধ্যামাঠপাড়ার বাসিন্দা পম্পা বিশ্বাস। টাকা জমানো, সে তো বাজারের টাকা থেকে খানিক সরিয়ে, নিজের হাত খরচ বাঁচিয়ে, কখন বা বরের পকেট কেটে!
দু’টাকা, পাঁট টাকা, দশ টাকা মিলিয়ে জমেও ছিল প্রায় হাজার তিনেক টাকা। কারও যাতে নজর না পড়ে তাই খাটের নীচে দেওয়াল ঘেঁষে রেখেছিলেন লক্ষ্মী ভাণ্ডারগুলো।
কিন্তু মঙ্গলবার মাঝ রাত থেকে নোট বাতিলের ধাক্কায় সংসারে সেই খুচরো টাকাই এখন মহার্ঘ হয়ে উঠেছে।
পড়িমড়ি করে ছুটেছিলেন এটিএম-এ। কিন্তু ততক্ষণে তার সামনে লম্বা লাইন। লাইন পেরিয়ে এটিমের কাছে যখন পৌঁছলেন, ততক্ষণে জবাব দিয়েছে এটিএম। অন্য এটিএমে যে যাবেন সে উপায় নেই। কারণ ততক্ষণে পেরিয়ে গিয়েছে রাত বারোটা।
অগত্যা স্ত্রীর শরণাপন্ন হলেন। অসময়ে ত্রাতা হলেন সেই স্ত্রীরই।
শুধু ওঁরা নন, নিজের একটু একটু করে জমানো টাকা এমন আকালের দিনে সংসারের কাজে তুলে দিয়েছেন করিমপুরের সেই আটপৌরে মহিলাও। তাঁর কথায়, ‘‘বছর দুয়েক ধরে সব্জি বিক্রির দশ-বিশ টাকা সরিয়ে রাখতাম। চার হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। এমন বিপদের দিনে স্বামীকে সেই টাকার কথা বলতেই উনি তো অবাক, বলছেন, তুমি তো সাক্ষাৎ লক্ষ্মী গো!’’
মন খারাপ বহরমপুরের নাট্যকর্মীর। জমানো টাকার কথা এ বার স্বামীকে জানাতেই হবে। তিনি জানান, পছন্দসই শাড়ি থেকে ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে স্বামীকে না জানিয়ে একটু একটু করে বেশ কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। এখন কোনও প্রয়োজন হোক না হোক টাকা আর জমাতে পারবেন না। কিন্তু জমানো টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিতেই চোখ ছলছল পোড় খাওয়া মানুষটার। যা দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনিও।
বাতিল নোট, এই আবেগহীন দিন যাপনেও কোথায় যেন মিলিয়ে দেয় দু’জনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy