Advertisement
০২ মে ২০২৪
Save River Campaign

নদী বাঁচানোর বার্তায় গঙ্গায় ৪০০ কিলোমিটার পাড়ি  

নদীর স্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জলের বাসিন্দাদের জীবন রক্ষার জন্য নদীপাড়ের মানুষদের সচেতন করতে ছোট্ট কায়াক নিয়ে ভেসে পড়েছেন মুর্শিদাবাদের আহিরণের সিআরপিএফ ঘাট থেকে গত ২৯ নভেম্বর।

নদী বাঁচাতে কায়াকে ফরাক্কা থেকে কলকাতার পথে সুদেষ্ণা। নবদ্বীপে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নদী বাঁচাতে কায়াকে ফরাক্কা থেকে কলকাতার পথে সুদেষ্ণা। নবদ্বীপে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৪১
Share: Save:

‘খেলনা’ নৌকায় তিনি একাকী পাড়ি দিয়েছেন ফরাক্কা থেকে কলকাতা। গঙ্গাবক্ষে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার এই যাত্রাপথের একলা নাবিক সুদেষ্ণা পাল করের একটাই উদ্দেশ্য, ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও।’

নদীর স্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জলের বাসিন্দাদের জীবন রক্ষার জন্য নদীপাড়ের মানুষদের সচেতন করতে ছোট্ট কায়াক নিয়ে ভেসে পড়েছেন মুর্শিদাবাদের আহিরণের সিআরপিএফ ঘাট থেকে গত ২৯ নভেম্বর। আগামী ১২ ডিসেম্বর তাঁর পৌঁছনোর কথা কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাটে। ইতিমধ্যে সুদেষ্ণা ছুঁয়েছেন বহরমপুর, পলাশী, উদ্ধারণপুর, কাটোয়া, অগ্রদ্বীপ, মায়াপুর, নবদ্বীপ। আগামী সপ্তাহে তাণর ছোট্ট কায়াক থামবে কালনা, শান্তিপুর, সবুজ দ্বীপ, কল্যাণী, ব্যারাকপুর ঘাটে। পথিমধ্যে তিনি যেমন আলাপ করছেন ডাঙার মানুষদের সঙ্গে। তেমনই কথা হচ্ছে জলের মাঝিমাল্লা এবং জেলেদের সঙ্গেও। তাঁদের কাছে তিনি যেমন নদীর বিপদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। মানুষকে নদী নিয়ে সচেতন করতে চাইছেন। তেমনই জলের মানুষদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন নদী নিয়ে নানা তথ্য।

বুধবার দুপুরে নবদ্বীপে পৌঁছন সুদেষ্ণা। বিকেল বড়ালঘাটে পথসভা করেন। সুদেষ্ণা বলেন, “ওয়াটার স্পোর্টসের জন্য বিখ্যাত কায়াক নিয়ে এত লম্বা যাত্রায় এই প্রথম। এই ধরনের একক কায়াকিং সচরাচর হয় না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে নদীর জীবন বাঁচাতে এমন কিছু করা খুব জরুরি।” তাঁর অনুসন্ধানের বিষয় হল নদীপাড়ের মানুষ এবং নদীর সঙ্গে জীবন-জীবিকার প্রশ্নে সম্পৃক্ত মানুষ কী ভাবে দেখেন নদীর দূষণ বা অন্যান্য সমস্যাকে। শহরের মানুষের সঙ্গে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গীর ফারাকই বা কতখানি। নিজেই জানালেন, সূত্র সন্ধানে নেমে আশ্চর্য সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাঁর। তিনি জেনেছেন নদী পাড়ের মহিলারা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনে নদীকে বর্জন করেছেন। ব্রত, পালাপার্বণ ছাড়া নদীপাড়ের মেয়ে-বউরা নদীতে যান না। তার প্রধান কারণ নিরাপত্তাহীনতা। তা ছাড়া সব বাড়িতে এখন শৌচাগারের ব্যবস্থা হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে কালনা, নবদ্বীপ, কাটোয়ার বিভিন্ন জায়গায় গঙ্গায় বার বার কুমিরের দেখা মিলেছে। এটা জেলেমাঝিরা নদীর পক্ষে ভাল লক্ষণ বলে জানিয়েছেন। সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘জেলেদের মতে গঙ্গায় কুমির আসার দুটি কারণ। ওরা এখানে খাবার মানে মাছ পাচ্ছে। দুই, খাদ্য পাচ্ছে বলে কুমির এখানে ডিম পাড়ছে। তাই বার বার দেখা যাচ্ছে।” জেনেছেন নদীর ডলফিন বা শুশুক প্রসঙ্গ। তবে মুর্শিদাবাদের শক্তিপুরের জেলেরা জানিয়েছেন উল্টো কথা। সুদেষ্ণা বলেন, ‘‘ওরা খুবই গরিব। ওদের বক্তব্য, একটা জালের দাম কয়েক হাজার টাকা। মাছের সঙ্গে জালে শুশুক জড়ালে সে ছিঁড়ে বেরিয়ে যায়। এতে ওদের খুব ক্ষতি হয়। কিন্ত তা সত্ত্বেও ওরা শুশুকদের মারে না। ওরা মা গঙ্গার বাহন। ওদের সঙ্গে কি শত্রুতা থাকতে পারে।’’ এ ক্ষেত্রেও খাবারের সন্ধানেই ডলফিন বা শুশুক ঘুরছে নদীজুড়ে।

এ দিন বিকেলে নবদ্বীপের বড়ালঘাটে ওই পথসভার আয়োজন করেছিল একাধিক পরিবেশ সংগঠন। সেখানেই এমন নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনান সুদেষ্ণা। বৃহস্পতিবার তাঁর কায়াক চৈতন্যধাম ছেড়ে ভেসে যাবে অদ্বৈতধামের উদ্দেশে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE