Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

দরজা আটকে রাজনীতিকে না বলে দিল স্কুল

তাঁরা গেলেন এবং ফিরে এলেন। ঢুকতে পারলেন না স্কুলে, দেখা হল না নির্যাতিতা সন্ন্যাসিনীর সঙ্গেও। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্কুলের পড়ুয়ারা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “আমরা রাজনীতি নয়, বিচার চাই।” শুক্রবার রাতে নদিয়ার রানাঘাটের মিশনারি স্কুলে ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা সত্তরোর্ধ্ব সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

স্কুলের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হল না। গেটের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি লকেট। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

স্কুলের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হল না। গেটের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি লকেট। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

বিতান ভট্টাচার্য
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

তাঁরা গেলেন এবং ফিরে এলেন। ঢুকতে পারলেন না স্কুলে, দেখা হল না নির্যাতিতা সন্ন্যাসিনীর সঙ্গেও। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্কুলের পড়ুয়ারা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “আমরা রাজনীতি নয়, বিচার চাই।”

Advertisement

শুক্রবার রাতে নদিয়ার রানাঘাটের মিশনারি স্কুলে ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা সত্তরোর্ধ্ব সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই সন্ন্যাসিনী এখন রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার কথা শুনে রবিবার রানাঘাটে গিয়েছিলেন বিজেপির লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাজ্য সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সম্পাদিকা দীপা বিশ্বাস ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। সেই সঙ্গে যান রাজ্য মহিলা কমিশন-সব বেশ কয়েকটি মানবধিকার ও খ্রিস্টীয় সংগঠনের সদস্যরাও। তবে রাজনীতির কোনও লোকজনকেই এ দিন স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এ দিন কলকাতা থেকে বিজেপির লোকজনের রানাঘাটে যাওয়ার খবর পেয়েই সকাল থেকে স্কুলের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। বেলা বাড়তেই সেখানে হাজির হন বিজেপির জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী, জেলা কমিটির সদস্য সুকুমার গোস্বামী-সহ জেলার অন্য নেতারাও। স্কুলের সামনে রাজনীতির লোকজন ভিড় করছেন খবর পেয়ে এ বার চলে আসে স্কুলের পড়ুয়ারা। তাদের হাতে ছিল ফেস্টুন। সাদা আর্ট পেপারের উপরে স্কেচ পেন দিয়ে লেখা ছিল ‘নো পলিটিকাল ফ্ল্যাগ। জাস্ট হিউম্যানিটি।’

সাম্প্রতিক অতীতে এ রাজ্য বেশ কয়েক বার এমন দৃশ্য দেখেছে। কামদুনি থেকে সুটিয়া, বামনগাছির সৌরভ চৌধুরীর মৃত্যু থেকে সালকিয়ার অরূপ ভাণ্ডারীর মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয় মানুষ রাজনীতিকে রুখে দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। মর্মান্তিক সব ঘটনাকে রাজনীতির চাপানউতোরের খেলায় পরিণত হতে দেবেন না বলে মনস্থ করেছেন তাঁরা। সেই মিছিলে এ বার পা মেলাল রানাঘাটও।

Advertisement

মিশনারি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ব্রায়ান ডি সুজা, লিমা ডি রোজারিও, দশম শ্রেণির ছাত্রী অদিতি বিশ্বাসরা সমস্বরে বললেন, “আমরা রাজনীতি বুঝি না, বুঝতে চাই-ও না। এটা কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়।”

পড়ুয়াদের প্রতিক্রিয়া দেখে এ দিন প্রথমে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন বিজেপির লোকজন। তাঁরা ভেবেছিলেন, রাজ্য নেতৃত্ব এলে বোধহয় ব্যাপারটা মিটে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। দুপুর বারোটা নাগাদ লকেট-সহ বিজেপির অন্যান্য রাজ্য নেতৃত্ব স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিজেপির শ’দুয়েক কর্মী-সমর্থক। কয়েক জন চিৎকার করে বলতে থাকেন, “লকেট চট্টোপাধ্যায় এসেছেন। আপনারা দরজা খুলুন।” লকেটকে দেখতে আশপাশের বাড়ির ছাদে তখন বেশ ভিড়। কিন্তু স্কুলের ভিতর থেকে কেউই দরজা খোলেননি। কর্মী-সমর্থকদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তাঁরা ‘দরজা খুলুন’ বলে চিৎকার শুরু করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রতাপবাবু তাঁদের চুপ করতে অনুরোধ করেন। ঠিক সেই সময়ই স্কুলের দরজা খুলে ভিতরে ঢোকেন গাংনাপুর থানার ওসি বাস্তব পাল-সহ অন্য পুলিশকর্মীরা। মিনিট কুড়ি পরে স্কুলের ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন এক জন ফাদার। তিনি লকেটের সঙ্গে কিছু কথা বলে বলেন। এবং বিনীত ভাবে বুঝিয়ে দেন যে, রাজনীতি থেকে দূরেই থাকতে চাইছেন তাঁরা। এ কথা শোনার পরে আর কেউই বিশেষ কথা বাড়াননি। এর পরে লকেট-সহ অন্যরা হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানেও নির্যাতিতা ওই সন্ন্যাসিনী কারও সঙ্গেই দেখা করতে চাননি।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ ঘটনাস্থলে আসেন সূর্যকান্তও। একই ভাবে তাঁর আসার খবর পেয়ে স্কুলের সামনে জড়ো হন সিপিএমের নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা। দরজা বন্ধ দেখে সূর্যবাবু সেখান থেকে চলে আসেন। পাশের একটি মাঠে তিনি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কথাবার্তা বলেন। তবে কোথাও বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলেই দাবি করে সূর্যবাবুর বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনায় হাসপাতালে গিয়ে সরাসরি নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলার বিরোধী আমি। সাধারণ ভাবে চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই কথা বলি। আর স্কুলেও ঢুকব, এমন কিছু বলিনি। ফাদার স্কুলের সামনের

রাস্তায় কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে ভিড়ের জন্য অসুবিধা ছিল। একটু দূরের মাঠে দাঁড়িয়ে কথা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.