তসিকুল ওয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
ইসরোর সফল চন্দ্রযান অভিযানে এ বার জুড়ল শমসেরগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম মহব্বতপুরের নাম। এই গ্রামেরই ছেলে ১৯৯২ সালে কলকাতার রাজাবাজার কলেজ থেকে বিটেক শেষ করে এমটেক-এ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া তসিকুল ওয়ারা পরের বছরেই যোগ দেন ইসরোতে। বর্তমানে ইসরোর একটি বিভাগীয় প্রধান। এ বারের চন্দ্রযান অভিযানে স্যাটেলাইট অ্যানালাইজ়ার হিসেবে যুক্ত ছিলেন তিনি। চার ভাইয়ের তৃতীয় তসিকুলের অন্য তিন ভাই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত।
গ্রামের পাশে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া ভাসাই পাইকর হাইস্কুল থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে জঙ্গিপুর হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। সেখান থেকে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স। পরে যোগ যোগ দেন রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এমটেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়ায় ডাক পান ইসরোয়। ১৯৯৩ সাল থেকে ইসরোর সঙ্গে যুক্ত তসিকুল। স্যাটেলাইট অ্যানালাইজ়ার হিসেবে খুব কাছ থেকে থেকেছেন এই চন্দ্র-অভিযানের সঙ্গে।
ইসরোর পাশেই আবাসনে থাকেন এখন তিনি ও তাঁর স্ত্রী শিরিন ওয়ারা। সফল চন্দ্র অভিযানে স্বামীর যোগদানকে খুব সম্মানের সঙ্গেই দেখছেন স্ত্রী শিরিন। বলছেন, ‘‘বিজ্ঞান চর্চায় যে ভাবে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন তিনি, তারই সাফল্য পেলেন আজ চন্দ্র অভিযানের সহকর্মী হয়ে। বহু মানুষের শুভেচ্ছা ও আর্শীবাদে আমি গর্বিত তো বটেই।’’
তসিকুলের গোটা পরিবার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। বাবা নিজামুদ্দিন আহমেদ ছিলেন মহব্বতপুর এলাকারই এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
তসিকুলের বড় ভাই আব্দুল ওয়ারা জঙ্গিপুরের একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এখন থাকেন শ্রীকান্তবাটীতে। মামার বাড়ি জঙ্গিপুরের রাধানগর গ্রামে। বিয়েও হয়েছে জঙ্গিপুর শহরের জয়রামপুরে। স্বভাবতই জঙ্গিপুরের মানুষও খুশি তসিকুলের এই সাফল্যে।
চন্দ্রযানের সফল অভিযানে ভাইয়ের এই ভাবে যুক্ত থেকে সাফল্য পাওয়ার ঘটনায় উচ্ছ্বসিত দাদা ফরাক্কার অর্জুনপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ওয়ারা। বলছেন,“চন্দ্রযান চাঁদে নামার আগে তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আমি মহব্বতপুরের দেশের বাড়িতেই রয়েছি। খুবই উৎকণ্ঠায় ছিল সবার মতো তসিকুলও। অভিযানের সাফল্যের পরে তার ব্যস্ততার কারণেই আর কথা বলা যায়নি।’’
ইসরোয় নিজের আবাসনে এই খুশির দিনে একে একে মনে করেছেন তার সহপাঠীদের কথা। ছোট্টবেলার গুলি খেলার বন্ধু জুলফিকার আলি, জঙ্গিপুরের নাট্যকর্মী দিব্যেন্দু দাস, হরিরামপুরের তাপস ঘোষ সবার কথা মনে আছে তসিকুলের।
বন্ধুরাও ভোলেননি তাঁকে। সুতির একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলি বলছেন, ‘‘বন্ধু নয়, যেন আত্মীয়। আমার বাবা ছিলেন একটি স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক। তাঁর কাছে পড়তে আসত তসিকুল।অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক সঙ্গেই পড়েছি। তার পরে তসিকুল গেল বিজ্ঞান বিভাগে, আমি কলা বিভাগে। চন্দ্রযান অভিযানে তার যুক্ত থাকার কথা শুনে গর্বে ভরে উঠেছে আমার বুক। যোগ্য ছেলের যোগ্য সাফল্য। প্রত্যন্ত গ্রামে থেকেও এই সাফল্য ক’জন পায়?” তসিকুল কবে আসবেন, তারই অপেক্ষা এখন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy