Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তার চেয়ে বাবা গ্রামীণ ডাক্তারই ভাল!

করোনার ভয়ে ভিড় কমেছে সরকারি হাসপাতালে। জ্বর-সর্দির উপশম নিয়ে গ্রামীণ মানুষ ফের ছুটেছেন গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে।

ফাঁকা: আমতলা হাসপাতাল।

ফাঁকা: আমতলা হাসপাতাল।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ০৪:৫৫
Share: Save:

করোনার ভয়ে ভিড় কমেছে সরকারি হাসপাতালে। জ্বর-সর্দির উপশম নিয়ে গ্রামীণ মানুষ ফের ছুটেছেন গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে।
কোভিড আতঙ্ক গাঁ-গঞ্জে পা ফেলতেই গত দেড় মাস ধরে লালারস পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে লম্বা লাইন পড়ছিল। লকডাউনের অনুশাসনে সে সময়ে জেলায় সংক্রমণ তেমন ছড়ায়নি বটে, কিন্তু ছবিটা বদলাতে শুরু করে ভিন রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একের পর এক শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন জেলায় প্রবেশ করতেই। দিন পনেরোর ব্যবধানে সংক্রামিতের সংখ্যাটা ২ থেকে ১০০ ছুঁয়েছে। আর তাতেই নয়া আতঙ্ক গ্রাস করেছে গ্রামীণ জনজীবনে— হাসপাতালে গেলে যদি সংক্রামিত হয়ে পড়ি!
হাসপাতালের পথ এড়িয়ে এ বার তাই গ্রামের মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন গ্রামীণ চিকিৎসকের চেম্বারে। মানুষের ভরসাস্থলে জাঁকিয়ে বসা সেই গ্রামীণ চিকিৎসকদের এক জন, রঞ্জন দত্ত। সর্বাঙ্গপুরের সেই চিকিৎসক বলছেন, ‘‘জ্বর, কাশি, গলাব্যাথা হলেই ছুটে আসছেন মানুষ। নাওয়া খাওয়ার সময় পাচ্ছি না গো! তবে আমি ওঁদের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’ আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ভুল ধারণা থেকে কত মানুষ যে শরীরে করোনা পুষছেন! গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে তার কোনও হিসেব থাকছে না।’’
জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক, ব্লক এবং গ্রামীণ হাসপাতালে ‘ফিভার ক্লিনিক’ খুলে বসে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ ধরে তার অধিকাংশই ফাঁকা। অথচ দিন কয়েক আগেই সামান্য জ্বর-হাঁচি-কাশি হলেই মানুষ ছুটতেন ওই সব ফিভার ক্লিনিকে। নওদা ব্লকে এ ছবিটা বড় স্পষ্ট। হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’সপ্তাহ আগেও গড়ে ৮০০ থেকে হাজার রোগীর ভিড় হত। এক ধাক্কায় সেই সংখ্যাটা কমে এখন একশো। হরিহরপাড়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা তৎপর, কিন্তু রোগীর দেখা নেই।’’ নওদার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মুকেশ কুমার সিংহের অভিজ্ঞতা, ‘‘অনেকেরই ধারণা উপসর্গ পেলেই তাঁদের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেই ভয়েই আর এ মুখো আসতে চাইছেন না গ্রামীণ মানুষ।’’ মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘জ্বর হলেই যে করোনা সংক্রমণ হয়েছে এমনটা না-ও হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা করানোটা আবশ্যক। না হলে রোগটাকে বেঁধে রাখা যাবে না তো, এই সহজ সত্যিটা মানতে হবে।’’ আশা, এএনএমসি-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এ ব্যাপারে বোঝালেও সাড়া তেমন মিলছে না। কিন্তু তাঁদের হাসপাতালমুখো করা যাচ্ছে না। তাঁরা অকপটেই বলছেন, ‘তার চেয়ে ঢের ভরসার জায়গা বাবা আমাদের গ্রামীণ চিকিৎসক!’ হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা নার্গিস বিবি বলছেন, ‘‘শুনছি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলেই কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার চেয়ে বাবা গ্রামের ডাক্তারের ওষুধই খাচ্ছি।’’
মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া
ফাঁকা: আমতলা হাসপাতাল।

করোনার ভয়ে ভিড় কমেছে সরকারি হাসপাতালে। জ্বর-সর্দির উপশম নিয়ে গ্রামীণ মানুষ ফের ছুটেছেন গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে।
কোভিড আতঙ্ক গাঁ-গঞ্জে পা ফেলতেই গত দেড় মাস ধরে লালারস পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে লম্বা লাইন পড়ছিল। লকডাউনের অনুশাসনে সে সময়ে জেলায় সংক্রমণ তেমন ছড়ায়নি বটে, কিন্তু ছবিটা বদলাতে শুরু করে ভিন রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একের পর এক শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন জেলায় প্রবেশ করতেই। দিন পনেরোর ব্যবধানে সংক্রামিতের সংখ্যাটা ২ থেকে ১০০ ছুঁয়েছে। আর তাতেই নয়া আতঙ্ক গ্রাস করেছে গ্রামীণ জনজীবনে— হাসপাতালে গেলে যদি সংক্রামিত হয়ে পড়ি!
হাসপাতালের পথ এড়িয়ে এ বার তাই গ্রামের মানুষ ভিড় করতে শুরু করেছেন বিভিন্ন গ্রামীণ চিকিৎসকের চেম্বারে। মানুষের ভরসাস্থলে জাঁকিয়ে বসা সেই গ্রামীণ চিকিৎসকদের এক জন, রঞ্জন দত্ত। সর্বাঙ্গপুরের সেই চিকিৎসক বলছেন, ‘‘জ্বর, কাশি, গলাব্যাথা হলেই ছুটে আসছেন মানুষ। নাওয়া খাওয়ার সময় পাচ্ছি না গো! তবে আমি ওঁদের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’’ আর তাতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘ভুল ধারণা থেকে কত মানুষ যে শরীরে করোনা পুষছেন! গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে তার কোনও হিসেব থাকছে না।’’
জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক, ব্লক এবং গ্রামীণ হাসপাতালে ‘ফিভার ক্লিনিক’ খুলে বসে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু গত দু’সপ্তাহ ধরে তার অধিকাংশই ফাঁকা। অথচ দিন কয়েক আগেই সামান্য জ্বর-হাঁচি-কাশি হলেই মানুষ ছুটতেন ওই সব ফিভার ক্লিনিকে। নওদা ব্লকে এ ছবিটা বড় স্পষ্ট। হরিহরপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দু’সপ্তাহ আগেও গড়ে ৮০০ থেকে হাজার রোগীর ভিড় হত। এক ধাক্কায় সেই সংখ্যাটা কমে এখন একশো। হরিহরপাড়ার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আজিজুল লস্কর বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা তৎপর, কিন্তু রোগীর দেখা নেই।’’ নওদার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মুকেশ কুমার সিংহের অভিজ্ঞতা, ‘‘অনেকেরই ধারণা উপসর্গ পেলেই তাঁদের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেই ভয়েই আর এ মুখো আসতে চাইছেন না গ্রামীণ মানুষ।’’ মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, ‘‘জ্বর হলেই যে করোনা সংক্রমণ হয়েছে এমনটা না-ও হতে পারে। কিন্তু পরীক্ষা করানোটা আবশ্যক। না হলে রোগটাকে বেঁধে রাখা যাবে না তো, এই সহজ সত্যিটা মানতে হবে।’’ আশা, এএনএমসি-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এ ব্যাপারে বোঝালেও সাড়া তেমন মিলছে না। কিন্তু তাঁদের হাসপাতালমুখো করা যাচ্ছে না। তাঁরা অকপটেই বলছেন, ‘তার চেয়ে ঢের ভরসার জায়গা বাবা আমাদের গ্রামীণ চিকিৎসক!’ হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা নার্গিস বিবি বলছেন, ‘‘শুনছি জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেলেই কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার চেয়ে বাবা গ্রামের ডাক্তারের ওষুধই খাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

corona government hospital covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE