E-Paper

আইসারে গবেষক ছাত্রের মৃত্যুতে অভিযোগ দায়ের

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে মৃতদেহ পরিবারের হাতে দেওয়ার কথা থাকলেও, নথিপত্রের জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। কল্যাণী এমসে ময়না তদন্ত শেষে, এ দিন দুপুরের পরে মৃতদেহ দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৩৮
ময়না-তদন্তের পরে গবেষক পড়ুয়া অনমিত্র রায়ের দেহ আইসারের মোহনপুর ক্যাম্পাসে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সহপাঠীরা। শনিবার।

ময়না-তদন্তের পরে গবেষক পড়ুয়া অনমিত্র রায়ের দেহ আইসারের মোহনপুর ক্যাম্পাসে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সহপাঠীরা। শনিবার। ছবি: সুদেব দাস।

মৃত্যুর আগে সমাজমাধ্যমে শেষ পোস্টের সূত্রে শনিবার নদিয়ার হরিণঘাটা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করল আইসার কলকাতার মৃত ছাত্র অনমিত্র রায়ের পরিবার। তিনি অ্যান্টি-র‌্যাগিং কমিটির কাছে অভিযোগ জানালেও, তারা আমল দেয়নি বলে পোস্টে লিখেছিলেন অনমিত্র। তা নিয়েএ দিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হন পড়ুয়াদের একাংশ। ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ-মিছিল হয়। অনমিত্র পোস্টে যে দু’জনের নাম লিখেছিলেন, তাঁর সেই সতীর্থ সৌরভ রায় ও গবেষণার সুপারভাইজ়ার অনিন্দিতা ভদ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও বহু চেষ্টাতেও এ দিন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আইসার কলকাতার জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্বতী ভৌমিক বলেন, “ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গড়া হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সমস্ত বিষয় খতিয়েদেখা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে মৃতদেহ পরিবারের হাতে দেওয়ার কথা থাকলেও, নথিপত্রের জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি। কল্যাণী এমসে ময়না তদন্ত শেষে, এ দিন দুপুরের পরে মৃতদেহ দেওয়া হয়। এ দিন দুপুরে অনমিত্রের খুড়তুতো দাদা হৃষিকেশ রায় অভিযোগ দায়ের করেন। বিকেলে পরিবার ও ছাত্রদের একাংশের তরফে অনমিত্রের দেহ আইসারের মোহনপুর ক্যাম্পাসে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের তরফে কেউ সেখানে হাজির ছিলেন না।

প্রতিবাদ-মিছিলে থাকা পড়ুয়ারা দাবি করেন, আগামী দিনে যাতে এমন আর না ঘটে, প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তাকে সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে হবে। যদিও বিষয়টি নিয়ে অধিকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ সংবাদ মাধ্যমকে অধিকর্তা সুনীলকুমার খাঁর মোবাইল নম্বর দিতে অস্বীকার করেন।

উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের বাসিন্দা অনমিত্র জীববিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন (পিএইচডি তৃতীয় বর্ষ)। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি সমাজমাধ্যমে একটি দীর্ঘ লেখায় অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় সৌরভ তাঁকে মানসিক নিপীড়ন, গালিগালাজ ও হেনস্থা করেছেন। বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও গবেষণা সুপারভাইজ়ার অনিন্দিতা ভদ্র এবং আইসার কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেননি।

আইসার সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের মে মাসে বিএসসি-এমএসসি ইন্টিগ্রেটেড কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাগর মণ্ডলকে আবাসনের শৌচালয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল গবেষণাগারে মেলে পিএইচ ডি-র ছাত্র শুভদীপ রায়ের মৃতদেহ। মিলেছিল ‘সুইসাইড নোট’, যাতে প্রতিষ্ঠানের এক গবেষক-শিক্ষককে মৃত্যুর জন্য দায়ীকরা হয়েছিল।

হৃষিকেশ বলেন, “সমাজমাধ্যমে ওই পোস্টে স্পষ্ট যে ভাইকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। আইসার কর্তৃপক্ষের তরফে সহযোগিতা পাইনি। ভাইয়ের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচার চাই।” হরিণঘাটা থানা জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। বিকেলেই পুলিশের একটি তদন্তকারী দলক্যাম্পাসে পৌঁছয়।

অনমিত্রের শ্যামনগরের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার-সহ দলের নেতৃত্ব। শুভঙ্করের বক্তব্য, “অনমিত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত ঠিক মতো করা দরকার।” কল্যাণী এমসে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-সহ সংগঠনের নেতৃত্ব। দেবাঞ্জনের অভিযোগ, “ওই ছাত্রকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে কার্যত বাধ্য করা হয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Suicide Case Mental Trauma IISER Kolkata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy