ঘটনার পরে পেরিয়ে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বহরমপুরের সরকারি হোম আনন্দ-আশ্রম থেকে পালিয়ে যাওয়া সাত জন বাংলাদেশি নাবালকের হদিশ মেলেনি। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সমনজিৎ সেনগুপ্তের সংক্ষিপ্ত জবাব, ওই সংক্রান্ত কোনও নতুন খবর নেই। প্রসঙ্গত, গত রবিবার গভীর রাতে হোমের দোতলার শৌচাগারের জানালার কাঁচ ভেঙে নিচে নেমে পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায় সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ ওই সাত বাংলাদেশি। যদিও হোম থেকে সাত জন আবাসিক পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রশাসন চেয়েছিল চাপা দিতে। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হতেই ভারপ্রাপ্ত সুপার এবং কর্তব্যরত এক জন নৈশপ্রহরীকে শো-কজ করার পাশাপাশি ওই রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে কাজে যোগ না দেওয়া অন্য এক জন নৈশপ্রহরীকে বরখাস্ত করেই দায় সারে প্রশাসন।
এদিকে সমাজকল্যাণ দফতরের অধীনে থাকা তিনটি হোম রয়েছে বহরমপুরে। তার মধ্যে আনন্দ-আশ্রম এবং কাজি নজরুল ইসলাম শিশু আবাসে গত কয়েক বছর ধরে কোনও স্থায়ী সুপার নেই। মহিলাদের থাকার জন্য পঞ্চাননতলা রেলগেটের কাছে শিলায়ন নামে যে হোম রয়েছে, সেই হোমের সুপারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে কাজি নজরুল ইসলাম শিশু আবাস চালানো হচ্ছিল এত দিন। অন্য দিকে হরিহরপাড়ার সিডিপিও অশোক মজুমদার অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন আনন্দ-আশ্রম হোমের। কিন্তু তিনি কয়েক দিনের ছুটি নেওয়ায় শিলায়ন হোমের সুপারকে বাড়তি আনন্দ-আশ্রমের দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় প্রশাসন। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনিক এক কর্তার কথায়, হোমগুলিতে সুপার রেসিডেন্সীল পদ। কিন্তু কোনও হোমেই সুপার সর্বক্ষণের জন্য থাকে না। প্রশাসন নির্বিকার।
এ ছাড়াও ওই বাংলাদেশিদের তাদের দেশে ফেরানোর বিষয় নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে বছর খানেক ধরে টালবাহান চলছে বলেও অভিযোগ। ওই বাংলাদেশি নাবালকরা যে হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে থাকতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে, তা নিয়ে সবিস্তারে রিপোর্ট সমাজকল্যাণ দফতর থেকে জেলাপ্রশাসনের কাছে থাকা সত্ত্বেও কেন এত দিন ওই নাবলাকদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এখন পালিয়ে যাওয়ার পরে দেখানোর জন্য শো-কজ থেকে বরখাস্ত করার ভান করছে প্রশাসন। এ দিন অবশ্য জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক শ্যামলকান্তি মণ্ডলকে আনন্দ-আশ্রম এবং আইসিডিএসের এক জন মহিলা সুপারভাইজরকে কাজি নজরুল ইসলাম হোমের সুপার পদে বহাল করেছে প্রশাসন।