বচসার জেরে নিজেরই নিরাপত্তারক্ষীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে বসলেন তৃণমূল নেতা! নদিয়া জেলার থানার পাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। এর পরেই একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অল্পের জন্য গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ওই নিরাপত্তারক্ষী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোয়েন্দা সূত্রে খবর মিলেছিল, প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা ছিল প্রাক্তন মাওবাদী ‘স্কোয়াড লিডার’ তথা বর্তমান তৃণমূল নেতা সেজাজুল হক শাহ মিঠুর। তাঁর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে একজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছিল। রবিবার গভীর রাতে ঘুমোতে যাওয়া নিয়ে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে বচসা বেধে যায় মিঠু শাহের। তার জেরে সটান নিরাপত্তারক্ষীকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে বসেন তিনি! তবে অল্পের জন্য গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষী তথা রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল জাহাঙ্গির আলম।
মিঠু শাহ করিমপুর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সহকারী সভাপতি। তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। বিধায়কের মৃত্যুর পর মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন মিঠু। স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার বিধায়কের স্মরণসভা শেষে একা একাই অস্বাভাবিক পরিমাণে মদ্যপান করেন তিনি। ঘটনার সময়েও অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মত্ত অবস্থায় ছিলেন। নিরাপত্তারক্ষী জাহাঙ্গির তাঁকে নিজের শোবার ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাতেই ক্ষেপে ওঠেন তৃণমূল নেতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে বচসা চলাকালীন আচমকা একটি এক নলা দেশি পিস্তল বার করে গুলি চালাতে শুরু করে দেন মিঠু। তাঁর স্ত্রী তথা নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তড়িঘড়ি ছুটে এসে নিরাপত্তারক্ষীকে নিজের ঘরে নিয়ে যান। এর পর তিনিই পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় পুলিশ বাহিনী। তৃণমূল নেতার বাড়ি ঘিরে ফেলে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি। শেষমেশ ভোররাতে ওই নেতার বাড়ি থেকে একটি এক নলা পিস্তল, দু’টি সেভেন ও নাইন এমএম পিস্তল, ৮ রাউন্ড কার্তুজ ও একটি গুলির খোল উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় নেতাকেও। খুনের চেষ্টা এবং অস্ত্র আইন-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সোমবার তাঁকে তেহট্ট মহাকুমা আদালতে হাজির করানোর পর হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার বাড়িতে কী ভাবে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
যদিও এ বিষয়ে মিঠুর দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই জলঙ্গি নদীর চরে অবৈধ ভাবে মাটি কাটার বিরোধিতা করছিলেন তিনি। থানার পাড়া থানার ওসির মদতে বেশ কিছু দিন ধরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে মাটি কাটা চলছিল। তার প্রতিবাদ করাতেই তাঁকে ‘পরিকল্পিত ভাবে’ ফাঁসানো হয়েছে। মিঠু বলেন, ‘‘ঘটনার দিন রাতে ৭টা ২৫ মিনিট নাগাদ বাড়ি ঢুকেছি। তার পর আর বেরোইনি। কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ অন্য দিকে, তৃণমূল নেতার স্ত্রী মানোয়ারা শাহ বলেন, ‘‘বিধায়ক তাপস সাহার মৃত্যুর পর ওঁর মানসিক বিকৃতি দেখা দিয়েছে। উনি সুস্থ অবস্থায় থাকলে নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে কোনও দিন এমন গণ্ডগোল করতেন না। তবে গুলি চালানোর ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’’ কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শূন্যে গুলি চালিয়েছেন বলে খবর পায় পুলিশ। এর পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্রও। তদন্ত চলছে।