Advertisement
১০ ডিসেম্বর ২০২৪

ব্লক সভাপতি কোণঠাসা, কোন্দল তুঙ্গে

তিনি ব্লক সভাপতি। অথচ প্রকাশ্যে ঘোষণা করে তাকে বাদ দিয়েই দলীয় কর্মসূচি নিয়েছেন ব্লকের যুব সভাপতি।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৮
Share: Save:

তিনি ব্লক সভাপতি। অথচ প্রকাশ্যে ঘোষণা করে তাকে বাদ দিয়েই দলীয় কর্মসূচি নিয়েছেন ব্লকের যুব সভাপতি। আর তাঁর সঙ্গে পা মিলিয়েছেন ব্লক তৃণমূলের দুই প্রাক্তন সভাপতি। তার জেরে আরও এক বার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা নেতারা।

এমনিতেই লোকসভা নির্বাচন ও উপনির্বাচনে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। একদা তৃণমূলের শক্তিশালী গড় বলে পরিচিত এই ব্লকে বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের পর কার্যত তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে দলের সংগঠন। তার সবচেয়ে বড় কারণ দলের অভ্যন্তরে এই কোন্দল।

তবে কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূলের অন্দরে নেতাদের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। সত্যজিৎ যখন ক্ষমতার তুঙ্গে, তখন কোন্দল মাথাচাড়া দিতে পারত না। কিন্তু গত সরস্বতী পুজোর আগের রাতে তিনি খুন হওয়ার পরে সেই কোন্দল আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। এক দিকে লক্ষ্মণ ঘোষ চৌধুরী, অন্য দিকে দুই প্রাক্তন ব্লক সভাপতি কল্যাণ চক্রবর্তী ও প্রণব বিশ্বাস।

সত্যজিৎ বেঁচে থাকতেই দলের কোন্দল হাতের বাইরে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছিল। গত পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে লক্ষ্মণ ছিলেন ব্লক সভাপতি। তাঁকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা বহু আসনে নির্দল প্রার্থী দেন। তার ফলও পেতে হয়েছেল হাতেনাতে। বেশ কিছু আসনে নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হলেও বেশ কিছু আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে যায়। পঞ্চায়েত ভোটে সত্যজিৎ লক্ষ্মণকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। লক্ষ্মণ ব্লক সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করা হয়নি। চেয়ারম্যান হিসাবে ব্লকের সংগঠন পরিচালনা করছিলেন সত্যজিৎ। লক্ষ্মণ কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে যান।

সত্যজিতের মৃত্যুর পরে এই ব্লকে তৃণমূল কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। লোকসভা নির্বাচন পরিচালনা করেন প্রণব বিশ্বাস, কল্যাণ চক্রবর্তীরা। পরিস্থিতি কঠিন বুঝে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব লক্ষ্মণকে ভোটে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। শেষ পর্যন্ত দলের ভরাডুবি হয়। প্রায় ২২ হাজার ভোটে পিছিয়ে যায় তৃণমূল। এর পরে শঙ্কর সিংহ দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হওয়ার পরে লক্ষ্মণকে আবার ব্লক সভাপতির দায়িত্বে ফেরান। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কোনও ভাবেই মানতে রাজি নন লক্ষ্মণের বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন। তাঁরা লক্ষ্মণকে অস্বীকার করে সমান্তরাল সংগঠন চালেতে থাকেন। এক সময়ে লক্ষ্মণের ঘনিষ্ঠ ব্লকের যুব সভাপতি গোপাল ঘোষও তাঁর পাশ থেকে সরে যান লোকসভা ভোটের আগে।

এই পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দলীয় আন্দোলন কর্মসূচিতেও সেই বিবাদ আবারও প্রকাশ্যে চলে আসে। শনিবার মাজদিয়ায় লক্ষ্মণের নেতৃত্বে ধর্না কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়নি গোপালদের। আবার রবিবার প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেখানে প্রণব, কল্যাণেরা থাকলেও দেখা মেলেনি লক্ষ্মণদের। যদিও গোপালেরা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরা কোনও ভাবেই লক্ষ্মণকে তাঁদের কর্মসূচিতে ডাকবেন না। তাকে বাদ দিয়েই দল করবেন।

গোপালের দাবি, “লোকসভা ভোটের আগে আমি লক্ষ্মণবাবুকে অনুরোধ করেছিলাম দলের প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে। তিনি তা করেননি। বরং বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন। ক’দিন আগেই যিনি বিজেপির হয়ে ভোট করেছেন, তাঁর নেতৃত্বে আমরা কোনও ভাবেই দলটা করতে পারব না।” কল্যাণও বলেন, “লক্ষ্মণবাবুকে আমরা কোনও ভাবেই ব্লক সভাপতি হিসাবে মানছি না। যে বিজেপির হয়ে আমাদের দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার করেছে, তাকে আমরা কোনও ভাবেই ব্লক সভাপতি হিসাবে মেনে নিতে পারছি না। আমরা তাকে বাদ দিয়েই দলের কর্মসূচি পালন করব।”

লক্ষ্মণ বলেন, “এই মিছিলের আয়োজন করেছে তো দলেরই যুব সংগঠন! সেটা তো দলেরই কর্মসূচি।” কিন্তু তাঁকে যে আমন্ত্রণ করা হয়নি? তারা যে দাবি করছে, লোকসভা ভোটে তিনি বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন? এই নিয়ে লক্ষ্মণ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সাংগঠনিক ক্ষমতা দখল নিয়ে নেতাদের এই আকচাআকচি দেখে কর্মীরা কিন্তু ক্ষুব্ধ। তাঁদের আক্ষেপ, লোকসভা ও কৃষ্ণগঞ্জের উপনির্বাচনে ভরাডুবি থেকেও শিক্ষা নেননি এই নেতারা। এর পরে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসবে। তখন কী করে সামাল দেওয়া যাবে? রবিবার রাতে শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘ওখানে একটা সমস্যা আছে। দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব। আশা করি, সমস্যা মিটে যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnaganj Nadia TMC Inner Clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy