Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩

আগাম টাকা দিয়ে বিপাকে বহরমপুর

বিপুল ছাড়ে মিলছে নামী কোম্পানির ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এসি-সহ গেরস্তালির নানা সামগ্রী। তবে শর্ত একটাই— ছাড় বাদ দিয়ে বাকি টাকা মিটিয়ে দিতে হবে ‘বুকিং’-এর সময়ে। দশ দিনের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে সে সব।

ইন্দ্রপ্রস্থের সেই দোকানের সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

ইন্দ্রপ্রস্থের সেই দোকানের সামনে ভিড়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০১:২০
Share: Save:

বিপুল ছাড়ে মিলছে নামী কোম্পানির ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এসি-সহ গেরস্তালির নানা সামগ্রী। তবে শর্ত একটাই— ছাড় বাদ দিয়ে বাকি টাকা মিটিয়ে দিতে হবে ‘বুকিং’-এর সময়ে। দশ দিনের মধ্যেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে সে সব।

Advertisement

এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি বহরমপুরের অনেকেই। ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় ওই দোকানে সামনে ভিড়ও হচ্ছিল ভালই। বুধবার পর্যন্ত শহরের শ’চারেক বাসিন্দা প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আগাম দিয়েও দিয়েছিলেন।

তামিলনাড়ুর একটি সংস্থা লোক ঠকানোর জন্য দোকান খুলেছে— এমন অভিযোগ পেয়ে বহরমপুর পুরসভা মালিক পক্ষকে বুধবার শুনানির জন্য ডেকে পাঠায়। কিন্তু শুনানিতে তাঁদের কেউ যোগ না দেওয়ায় বুধবারেই ওই দোকানের লাইসেন্স বাতিল করে পুরসভা। দোকান ও গুদামে তালা ঝুলিয়ে ওই সংস্থার ম্যানেজারকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে পুরসভা।

এ দিকে যাঁরা ওই দোকানে আগাম টাকা জমা দিয়েছিলেন, তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে ওই দোকানের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন শহরের বহু বাসিন্দা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পুরসভা দোকানটি চালু রেখে ‘বুকিং’ বন্ধ করলেই ভাল করত। তাহলে যাঁরা আগাম টাকা দিয়েছেন, তাঁরা অন্তত জিনিসগুলো পাওয়ার সুযোগ পেতেন। এখন সেই টাকা ফেরত কিংবা নির্দিষ্ট সামগ্রী আদৌ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বহু লোকজন।

Advertisement

তবে এমন ঘটনা শহরে এই প্রথম নয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় গোরাবাজারে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে দোকান খুলেছিল একটি সংস্থা। কম দামে সহজ কিস্তিতে জিনিসপত্র বিক্রি করত তারা। লোকজনও হইহই করে সেখান থেকে জিনিসপত্র কিনতে শুরু করেন। এক সময় ওই সংস্থার লোকজন প্রতারণা করে শহর থেকে উধাও হয়ে যায়। কিন্তু ওই বাড়িতে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায় ক্ষুব্ধ জনতা। সেই আশঙ্কা থেকে এ বারে অভিযোগ আসতেই নড়েচড়ে বসে পুরসভা।

বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য জানান, ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েই সংস্থার মালিককে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মালিক শুনানিতে না এসে পালিয়ে যান। তাই বুধবার ওদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আসা অভিযোগপত্র পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেব। ভুক্তভোগীদেরও থানায় অভিযোগ জানাতে বলেছি। ওই সংস্থার মালিক থেকে কর্মকর্তা সকলেই তামিলনাড়ুর। ওই সংস্থার ম্যানেজারকে আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’’

পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে পুরসভা বা কারও পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ আসেনি। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে পুলিশ গোটা বিষয়টির উপরে নজরে রাখছে।’’ পুলিশ ও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থে ৫ মার্চ তামিলনাড়ুর একটি সংস্থা ওই দোকান খোলে।

পুরসভার কর্তাদের দাবি, প্রাথমিক ভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, মানুষের কাছে বিশ্বাস অর্জন করতে প্রথম দিকে সময় মতো জিনিসপত্র সরবরাহ করছিল। হয়তো, আরও বেশি টাকা নিয়ে তারা উঠে যেত। কিন্তু শুধু সন্দেহের বশে কি এমনটা করা যায়? পুরকর্তাদের দাবি, ‘‘ওদের কাজকর্ম যদি ঠিকঠাক থাকত, তাহলে শুনানিতে না এসে সবাই পালিয়ে গেলেন কেন?’’ ওই সংস্থার তরফে অবশ্য কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

ইন্দ্রপ্রস্থের বাসিন্দা সুবোধ কুণ্ডু ও তাঁর স্ত্রী সুমিতা কুণ্ডু বাসনপত্র কেনার জন্য প্রায় ছ’হাজার টাকা আগাম জমা দিয়েছিলেন। ২৪ ও ২৭ মার্চ সেগুলো পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। সুবোধ বলছেন, “এখন কী হবে, বুঝতে পারছি না।” ওই এলাকার পূরবী ভাদুড়ি দে ফ্রিজ ও ওয়াশিং মেশিন কেনার জন্য ৩০ হাজার টাকা আগাম দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘পুরসভা দোকানটি চালু রেখে বুকিং বন্ধ করলেই থেকে ভাল হতো।’’

এ দিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার পথে নামে কংগ্রেস। শহর কংগ্রেসের সভাপতি অতীশ সিংহ বলেন, ‘‘যাঁরা টাকা দিয়েছেন তাঁদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে পুরসভাকেই। কারণ, পুরসভা এর দায় এড়াতে পারে না।’’ যা শুনে তৃণমূলের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলছেন, ‘‘কংগ্রেস এখন ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে। যা করার আমরা মানুষের স্বার্থেই করেছি। না হলে আরও বহু মানুষ প্রতারিত হতেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.