কৃষ্ণনগর সাধারণ গ্রন্থাগারের উল্টো দিকে মনমোহন ঘোষ স্ট্রিট। তার পাশে দত্তবাড়ি। সেখানকার দুর্গা প্রতিমার দোমেটে হয়ে গিয়েছে। এখন মণ্ডপ পরিষ্কারের কাজ চলছে জোরকদমে।
এ বছর এই বাড়ির দুর্গাপুজো ১০০ বছরে পা দিচ্ছে। পুজো ঘিরে তাই দত্তবাড়ির সদস্যদের উৎসাহ-উদ্দীপনা অন্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের প্রান্তিককুমার দত্ত জানালেন, বাড়ির গৃহ দেবতা লক্ষ্মীনারায়ণ হলেও তাঁর দাদু অশ্বিনীকুমার দত্ত ছিলেন শক্তির উপাসক। কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অশ্বিনীকুমার দত্তই মাজদিয়ায় তাঁদের পৈতৃক ভিটেয় দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন। অশ্বিনীর মৃত্যুর পরে তাঁর মেজ ছেলে ভোলানাথ দত্ত মজদিয়া থেকে দুর্গাপুজো তাঁদের কৃষ্ণনগরের বাড়িতে নিয়ে আসেন। দত্তবাড়ির এক চালার ডাকের সাজের দেবীপ্রতিমা। তিনি পূজিতা হন শাক্তমতে। পুজোয় দেবীকে কোনও অন্নভোগ দেওয়া হয় না। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবীকে দিনে খই, মুড়কি, দই, কলা, মিষ্টি, নারকেল নাড়ু ও নানা ধরনের ফলের ভোগ দেওয়া হয়। রাতের ভোগে দেওয়া হয় লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি ও সুজির পায়েস। অষ্টমীর দিন হয় কুমারি পুজো। আঁখ, চালকুমড়ো ও কলা বলি হয় অষ্টমী, সন্ধিপূজা ও নবমীর পুজোয়।
দত্তবাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট কাদা খেলা। সপ্তমীর দিন বিশেষ পুজো পাঠের মধ্যে দিয়ে মণ্ডপের সামনে সাত রকম ফল ঝুলিয়ে রাখা হয়। নবমীর দিন মণ্ডপের সামনে একটা বড় গর্ত তৈরি করে, কাদা জল ভর্তি করে সেই ঝুলিয়ে রাখা ফল কাদার গর্তে দেওয়া হয়। পাড়ার ছেলেরা কাদা ভর্তি গর্তে নেমে সেই ফল সংগ্রহ করেন।
তবে কয়েক বছর ধরে কাদা খেলার প্রথা বন্ধ আছে বলে জানান প্রান্তিক দত্ত। কাদা খেলার মতোই বন্ধ হয়েছে বেহারাদের কাঁধে চেপে জলঙ্গি নদীতে দেবীর বিসর্জন। এখন বিসর্জন হয় প্রতিমাকে লরিতে চাপিয়ে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)