থানার বাগানে আনাজ চর্চা। ফাইল চিত্র
ভাঙা সাইকেলের স্তূপ, বারান্দার কোণে অযত্নে পড়ে থাকা বাজেয়াপ্ত বস্তা আর ডিউটি অফিসারের লম্বাটে টেবিলের সামনে কাঁচুমাচু কয়েকটি গ্রামীণ মুখ। থানার সাবেক চেহারার সঙ্গে খাপে খাপ মিলে যাচ্ছে।
মিলছে না গরাদের পাশ ঘেঁষে পায়ে হাঁটা রাস্তাটা ধরে থানার ঠিক পিছনের খোলা ডাঙার দিকে দু’পা হাঁটলে— ঘন বুনোটের বাঁধা কপি, শিশির ভেজা নরম আলোর মতো সবজে উচ্ছে আর ফিনফিনে মাচায় ঝলমল করছে লাউ। ইতিউতি লঙ্কা, বুনো ঝোপের মতো এ ওর গায়ে ঢলে পড়া পালংয়ের খেতে মমতায় জল দিচ্ছেন লেডি পুলিশ। থানার সামনে–পিছেন তফাতটা আকাশ-পাতাল।
সেই আনাজেই থানার হেঁসেলে বাঁধাকপির তরকারি, বড়ি-পালংয়ের ঝোল। হোগলবেড়িয়া থানার বড়বাবু কম্পটন রায় মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘রান্নাঘর থেকে যা মন ভাল করা গন্ধ আসছে, কাজে মন বসছে না!’’ নদিয়ার প্রান্তিক থানা হোগলবেড়িয়া নয়, থানার পিছনে পতিত জমিতে আনাজ রাঙিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পড়শি মুর্শিদাবাদের রানিনগর থানাও।
সে থানার বড়বাবু অরূপ রায় বলছেন, ‘‘আর বলবেন না, মাস কয়েক আগে রান্না ঘরে ঢুকে ঝাঁঝালো হয়ে উঠতেন আমাদের রান্নাঘরে মাসি, রান্না হবে কীসে শুনি, ঝুড়িতে একটাও আনাজ নেই!’’ সে ঘাটতি মেটাতেই রানিনগর থানার পিছনের খোলা জমিতে দেদার ফলছে বিট-গাজর, কপি, মুলো লঙ্কার বাহারি বাগান।
হোগলবেড়িয়া থানার পিছনে সাকুল্যে চার কাঠা জমি। এ বার হই হই করে আনাজ হয়েছে সে জমিতেই। শীতের মরসুমে বাজার যখন তপ্ত হয়ে আছে, থানার মেজ-সেজ বাবু থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার, মহিলা পুলিশ কর্মীরা তখন পাত পেড়ে আনাজে আহার সারছেন। আর পুলিশি কাজ-কম্মের ফাঁকে তাঁরাই, জমি তৈরি করে, জল দিয়ে এখন কাঁখে ঝুড়ি নিয়ে তুলে আনছেন পেঁয়াজকলি থেকে ফুলকপি।
মাস খানেক আগেও থানার মেসে খাবারের জন্য প্রতি দিন আনাজ বাবদ প্রায় তিনশো টাকা খরচ হত। এখন সে খরচ অর্ধেক। কীবাবে হল? মুচকি হেসে থানার এএসআই ঋত্বিক সরকারের জবাব, ‘‘আগে থানা চত্বরের এই জমিতে নোংরা আবর্জনায় ভরে থাকত। কোথাও পড়ে ছিল বাজেয়াপ্ত সাইকেল, ভ্যান রিকশা কোথাও পুরনো বস্তা।’’ মাস ছয়েক আগে সিভিক ভলান্টিয়াররা জমিটা সাফ সুতরো করে সেখানে ফলিয়েছেন আনাজের খেত।
ছবিটা প্রায় হুবহু এক রানিনগর থানায়। থানার পিছনের বিঘা চারেক ঘেরা বাগানে এখন নষ্ট আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে মাথা তুলেছে আলু থেকে কলা, মূলো থেকে গাজর, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা, সিম, পালং। রানিনগর থানার মেস বাড়ির এক পুলিশ কর্মীর কথায়, ‘‘কাজের চাপে মাথা গরম হলে বাগানে তাকাই!’’ থানার আনাজ বুঝি দু’দণ্ড শান্তিও ছিটিয়ে দিচ্ছে তাঁদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy