লাগানো হয়েছে মাইক। নিজস্ব চিত্র
আলো ফোটার আগেই হাঁটতে বেরোও। সংক্ষেপে এটাই বহু জনের সুস্থ থাকার বীজমন্ত্র।
ভোরের আগেই তাঁরা বিছানা ছাড়েন। তার পর বেরিয়ে পড়েন প্রাতর্ভ্রমণে। যাঁদের মধ্যে প্রবীণদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু পথ কি তাঁদের চলার পাথেয় জোগায়?
এত দিন এক সঙ্গে পথ চলতে-চলতে নিজেদের মধ্যে গল্প করা ছাড়া ওঁদের মনোরঞ্জনের জন্য আর কিছুই ছিল না। সেই অবস্থাটাই বোধহয় এ বার পাল্টে যেতে চলেছে, অন্তত রানাঘাটে। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের জন্য তৈরি হতে চলেছে ‘ওয়াকিং জোন’।
কেমনটা হবে সেই ‘জোন’?
হাঁটতে হাঁটতে হেঁটে চলার অনন্ত একঘেয়েমি দূর করতে সেখানে নাকি রাস্তার ধারে থাকবে ছোট-ছোট ৪২টি স্পিকার। সেখানে মৃদু আওয়াজে গান বাজবে, তৃণমূল সরকার আসার পরে যেমনটা বাজে নানা ট্রাফিক মোড়ে। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, পুরনো দিনের গান, সেতার চুঁইয়ে পড়বে হাঁটিয়ে ঘেমে ওঠা কানের অন্দরে। রোজ ভোড় ৫টা থেকে সকাল ৭টা এবং বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত নিখরচায় গান শোনার এই বন্দোবস্ত।
রানাঘাট পুরসভা সূত্রের খবর, আপাতত ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথম এই ‘জোন’ চালু হচ্ছে। কোর্ট মোড় থেকে রানাঘাট থানা, মহকুমাশাসকের বাংলো, নির্মীয়মাণ পিকনিক গার্ডেন, চূর্ণী নদীর পাড় হয়ে বার লাইব্রেরি পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা নিয়ে এই জোন তৈরি করা হচ্ছে। তার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। পরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও এ রকম ‘জোন’ করার ভাবনাচিন্তা চলছে।
আসলে ওই এলাকার কাউন্সিলার নিজেই যে হাঁটিয়েদের এক জন। তিনি, কোশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কয়েক জন বন্ধু রোজ প্রাতর্ভ্রমণে বেরোই। তখন দেখেছি, অনেকে একঘেয়েমি দূর করতে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে। সেই থেকেই গান বাজানোর ব্যবস্থা করার ভাবনা মাথায় আসে।’’
তিনি জানান, রাস্তায় হাঁটহাঁটি করলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে বয়স্কদের। সেই কারণেই এলাকা (জোন) নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। সেখান দিয়ে কোনও গাড়ি চলে না। মনোরম পরিবেশ। ওই রাস্তায় যেতে দু’টো মাঠও পড়ে। অনেকে হাঁটার পরে শরীরচর্চা করেন। তাঁরা ওই মাঠ দু’টি ব্যবহার
করতে পারবেন।
রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মূলত প্রবীণ নাগরিকদের কথা ভেবে এই উদ্যোগ। প্রাতর্ভ্রমণের জন্য নির্দিষ্ট রাস্তা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা হাঁটবে, তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য গানের ব্যবস্থা হচ্ছে। পরে শহরের অন্যত্রও এই ব্যবস্থা করা হবে।”
স্বভাবতই খুশি প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। তাঁদের অন্যতম অনিল পাল, শফিকুল ইসলামেরা বলেন, “রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় হয়। এমন ভাবে গাড়ি যায়, মনে হয়, এই বুঝি গায়ের উপর দিয়ে চলে গেল। একটি নির্দিষ্ট রাস্তা থাকলে সেই ভয় থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy