Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Chakdaha

দূষিত জলের স্মৃতিই অমলিন

পুরবাসীদের একাংশ জানান, শহরের সব ওয়ার্ডেই কমবেশি পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। দিনে চার বার জল দেওয়ার কথা। মাঝে মাঝে ছেদ পড়ে সেই নিয়মে।

স্থানীয়দের ভরসা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

স্থানীয়দের ভরসা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার
চাকদহ শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

পুরভোটে তৃণমূলের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রতিটি শহরবাসীর জন্য পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে। ২০১৩ সালের ওই নির্বাচনে সব কটি আসনে জিতে চাকদহ পুরসভা দখল করে তারা। ফের দুয়ারে পুরভোট। পুরবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, পরিস্রুত পানীয় জল এখনও অধরা।

পুরবাসীদের একাংশ জানান, শহরের সব ওয়ার্ডেই কমবেশি পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। দিনে চার বার জল দেওয়ার কথা। মাঝে মাঝে ছেদ পড়ে সেই নিয়মে। সন্ধেবেলা জল দেওয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে জল দেওয়ার সময় নিয়েও। যতটা সময় ধরে জল দেওয়ার কথা তা দেওয়া হয় না। জলের গতিও বেশ কম। আবার যে জল সরবরাহ করা হয়, তা পানের অযোগ্য। এমনকি, সেই জলে জামা-কাপড়ও পরিষ্কার করা যায় না। ফলে, যাঁদের পক্ষে সম্ভব, তাঁরা জল কিনে খান। কেউ কেউ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে গ্যাঁটের টাকা খরচ করে মাটির তলায় রিজার্ভার গড়েছেন।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পানীয় জল সরবরাহ করতে শহরে গভীর নলকূপ এবং কয়েকটি বুস্টার রয়েছে। তারই মাধ্যমে বিভিন্ন বাড়িতে এবং রাস্তার ধারে জল সরবরাহ করা হয়। পুরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, নিয়মিত দেখভাল না হওয়ায় মাঝে মাঝে জলের পাইপ ফেটে যায়। পানীয় জলে নোংরা মেশে। সেই দূষিত জলই সরবরাহ করা হয়। কিছু দিন আগে শহরের একাংশের মানুষ ওই রকম দূষিত জল খেয়ে পেটের যন্ত্রণা, বমি, জ্বরে কাবু হয়ে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পরে পুরসভার জলে অনেকের ভীতি জন্মেছে।

পুরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, সব ওয়ার্ডে পানীয় জলের সমস্যা থাকলেও ১, ২, ১৫ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্যা ‘ভয়াবহ’ আকার ধারণ করেছে। বাধ্য হয়ে পাশের পঞ্চায়েতের সরবরাহ করা জলের উপর ভরসা করছেন অনেকে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভবানীপুরের বাসিন্দা দীপক দাস বলেন, ‘‘জল দেওয়ার সময় প্রথম দশ মিনিট পচা জল বার হয়। পরে যে জল মেলে তা পান করা যায় না। বাড়ির অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়। পাশে পঞ্চায়েত এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল মেলে। সেখান থেকে জল নিয়ে এসে খাই।’’ ২০ নম্বর ওয়ার্ডের খোসবাস মহল্লার বাসিন্দা সুকুমার রুদ্র বলেন, “আমরাও পঞ্চায়েত এলাকা থেকে জল এনে খাই। ছেলে একটা জার কিনেছে। সেই পঞ্চায়েতের কল থেকে সেই জারে জল ভরে আনে।”

২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওয়ার্ডের অনেক জায়গায় জলের পাইপই বসেনি। ফলে, পুরসভার জল খাওয়ার সুযোগ নেই। নেতাজিনগরের বাসিন্দা সুজিত কর্মকার বলেন, “আমাদের এলাকায় পাইপ লাইনের জল যায়নি। আমরা সেখানে নলকূপের জল

পান করি।” ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পরিতোষ দাস বলেন, “আমাদের জলের গতি খুব কম। খুব সমস্যা হয়। এক বালতি জল নিতে অনেক সময় লাগে” ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা অজিত দত্ত বলেন, “কোনও উপায় না থাকায় রাস্তার ধারের কলের জল পান করি। যাঁদের পক্ষে সম্ভব তাঁরা ২৫-৩০ টাকা দরে জারের জল কিনে খাচ্ছেন।”

চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি বিবর্তন ভট্টাচার্য বলেন, “পরিস্রুত পানীয় জল বলতে কিছুই পাওয়া যায় না এই শহরে। পুরসভা যে জল সরবরাহ করছে, তা পানের অযোগ্য।’’ তাঁর দাবি, “অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জলের লাইন করা হয়েছে। কোথাও পাইপ নর্দমা ঘেঁষে গিয়েছে। জল সরবরাহের পাইপও খুব সরু। যে কারণে জল ঠিক মতো সরবরাহ হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE